তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোর সংগঠনের পক্ষ থেকে চাহিদা ছিল না। এমনকি মার্চেন্ট ব্যাংকগুলোর সংগঠনও এর বিপক্ষে। এরপরও আইপিওর মোট ১৫ শতাংশ শেয়ার প্রাইভেট প্লেসমেন্ট আকারে বিক্রির সুযোগ রেখে আইপিও বিধিমালা সংশোধন করেছে শেয়ারবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। সংশোধিত বিধিমালা গেজেট আকারে প্রকাশের অপেক্ষায়। সংশ্নিষ্ট সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
জানা গেছে, নিয়ন্ত্রক সংস্থার শীর্ষ এক কর্মকর্তার ইচ্ছাতেই আইপিও বিধিমালায় এ সুবিধা যুক্ত করা হয়েছে। যদিও বিভিন্ন মার্চেন্ট ব্যাংক, শীর্ষ ব্রোকারেজ হাউস এবং নিয়ন্ত্রক সংস্থারই ঊর্ধ্বতন একাধিক কর্মকর্তা মনে করেন, আইপিও শেয়ার প্লেসমেন্ট আকারে বিক্রির এ সুযোগ দুর্নীতি ও তদবির বাণিজ্য বাড়াবে। এতে বাড়তি জটিলতা সৃষ্টি ছাড়া বিশেষ কোনো উপকার হবে না।
এদিকে আইপিওর আগে যে মূলধন বাড়ানো হয়, তার ভূতপূর্ব অনুমোদন নেওয়ার বাধ্যবাধকতা আরোপ করতে আইপিও বিধিমালা সংশোধন করার যে প্রস্তাব করেছিল বিএসইসি, তাও প্রত্যাহার করে নিয়েছে সংস্থাটি।
রিং শাইন টেক্সটাইল কোম্পানির প্রাইভেট প্লেসমেন্ট জালিয়াতি উদ্ঘাটনের মাত্র দুই মাসের মধ্যে এমন বিধান করার প্রস্তাব করেও কমিশন কেন তা আইনে রূপান্তর করার পথ থেকে পিছিয়ে এলো- তার যৌক্তিক ব্যাখ্যা কমিশনের কেউ দিতে পারেননি। তবে কমিশনের সংশ্নিষ্ট এক কর্মকর্তা জানান, এর জন্য পৃথক বিধান করা হতে পারে।
বস্ত্র খাতের তালিকাভুক্ত কোম্পানি রিং শাইন আইপিওতে আসার এক বছর আগে ৯ কোটি ৯৫ লাখ টাকার পরিশোধিত মূলধনকে রাতারাতি ২৮৫ কোটি ১০ লাখ টাকায় উন্নীত করে। কিন্তু কমিশন প্রমাণ পায়, ২৭৫ কোটি টাকা মূলধন বৃদ্ধি ছিল ‘ভুয়া’। এ শেয়ার বিক্রি থেকে কোম্পানিটি কোনো টাকাই পায়নি। ভুয়া প্লেসমেন্ট ইস্যু করে মালিকরা শেয়ার এবং প্লেসমেন্ট শেয়ারে ক্রেতাদের দেওয়া টাকা হাতিয়ে নিয়েছিলেন তারা। জানা গেছে, তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোর সংগঠন বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব পাবলিকলি লিস্টেড কোম্পানিজের (বিএপিএলসি) পক্ষ থেকে কোনো আপত্তি ছিল না।
আইপিও বিধিমালা সংশোধন ইস্যুতে জনমত জরিপে অংশ নিয়ে আইপিওতে ১৫ শতাংশ শেয়ার প্লেসমেন্ট আকারে বিক্রির প্রস্তাব প্রত্যাহার করে নিতে মত দিয়েছিল মার্চেন্ট ব্যাংকগুলোর সংগঠন বিএমবিএ। সংগঠনটির পক্ষ থেকে এ প্রস্তাবের বিরোধিতা করে বলা হয়, এমন প্রস্তাব গ্রহণ করা হলে স্বেচ্ছাচারিতা বাড়বে এবং নানা পক্ষ থেকে অযাচিত প্রভাব বিস্তার হবে।
বিএমবিএর নেতারা জানান, আইপিওর শেয়ার প্লেসমেন্ট আকারে বিক্রির কোনো যুক্তি নেই। কার স্বার্থে এবং কার প্রস্তাবে আইপিও বিধানে এমন সুবিধা যুক্ত করা হচ্ছে, তা বোধগম্য নয়। বিএসইসির সাবেক চেয়ারম্যান ফারুক আহমেদ সিদ্দিকীও এমনটা মনে করেন। তিনি বলেন, আইপিও অনুমোদনের ২ থেকে ৩ মাসের মধ্যেই যেহেতু কোম্পানি মূলধন পেয়ে যায়, তখন শেয়ার প্রাইভেট প্লেসমেন্ট আকারে বিক্রির দরকার কেন। আইপিও শেয়ার তালিকাভুক্তির পর বড় ধরনের দরের উত্থান হয় বলে এখন বড় অঙ্কের শেয়ার পেতে অসুস্থ প্রতিযোগিতা শুরু হবে এবং একে ঘিরে নতুন ধরনের অনিয়ম হবে। এতে কমিশনের ভাবমূর্তি নষ্ট হবে বলেও আশঙ্কা প্রকাশ করেন তিনি।
আইপিওর শেয়ার প্লেসমেন্ট আকারে বিক্রির কোনো যুক্তি আছে কিনা, সম্প্রতি এমন প্রশ্ন করা হয়েছিল বিএসইসির চেয়ারম্যান শিবলী রুবাইয়াত-উল ইসলামকে। তিনি সমকালকে বলেন, প্লেসমেন্ট বাণিজ্য কমাতেই আইপিও শেয়ারের প্লেসমেন্ট নীতি করা হচ্ছে। কিন্তু আইপিও নিয়ে কাজ করা মার্চেন্ট ব্যাংকগুলোর কর্মকর্তারা বলেন, আইপিওর শেয়ার প্লেসমেন্ট আকারে বিক্রির সুযোগ রাখা হলে কী করে প্লেসমেন্ট বাণিজ্য বন্ধ হবে- তা বোধগম্য নয়। কারণ, প্রতিটি কোম্পানি আইপিওতে আসার আগে প্লেসমেন্ট আকারে বড় অঙ্কের শেয়ার বিক্রি করে। এভাবে ৫ থেকে ১০ কোটি টাকার কোম্পানি ৪০ থেকে ৫০ কোটি টাকার কোম্পানি হয়। নতুন করে বিক্রি করা শেয়ারের অংশ মালিকরা নিজ নামে রাখেন, বাকিটা বিক্রি করেন। এ ধারা বন্ধ হওয়ার সুযোগ নেই। বাংলাদেশের প্রায় প্রতিটি কোম্পানির মূলধন ছোট, যা নিয়ে আইপিও আবেদন করা যায় না।
এদিকে বুক বিল্ডিং প্রক্রিয়ায় ১ শতাংশের কম শেয়ার নিয়ে ওয়ালটন তালিকাভুক্ত হওয়ার পর এমন ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঠেকাতে আইপিওতে অন্তত ১০ শতাংশ শেয়ার বিক্রির বিধান ফিরিয়ে আনতে গত মার্চে সংশোধন প্রস্তাব করে বিএসইসি। নতুন সংশোধনে এ বিধান যুক্ত করা হয়েছে। এছাড়া আইপিওর ৬৫ শতাংশ সাধারণ বিনিয়োগকারীদের জন্য সংরক্ষিত রেখে সংশোধন চূড়ান্ত করেছে বিএসইসি। তবে এই ৬৫ শতাংশ থেকে ১৫ শতাংশ প্লেসমেন্ট আকারে বিক্রির সুযোগ রাখা হচ্ছে। অর্থাৎ সাধারণ বিনিয়োগকারীরা মূলত আইপিওর ৫০ শতাংশ পাবেন।
Posted ৬:৩১ পূর্বাহ্ণ | বৃহস্পতিবার, ০৫ আগস্ট ২০২১
dailymatrivumi.com | Mohammad Salahuddin