বাণী ইয়াসমিন হাসি
গত কয়েকদিন ধরে নিক্সন চৌধুরীকে নিয়ে বইছে আলোচনার ঝড়। কেউ সমালোচনা করছেন আবার কেউবা জানাচ্ছেন সাধুবাদ। দেশের তরুণ সমাজ এবং নিজের ভোটারদের মধ্যে ব্যাপক জনপ্রিয় এই স্পষ্টভাষী সাংসদ। ভোটের মাঠে দায়িত্বরত নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটকে গালি ও হুমকি দেওয়ার যে অডিও ফেসবুকে ভাইরাল হয়েছে, তা ‘সুপার এডিটেড’ বলে দাবি করেছেন ফরিদপুরের সংসদ সদস্য মুজিবর রহমান চৌধুরী নিক্সন।
গত শনিবার চরভদ্রাসন উপজেলা পরিষদের উপনির্বাচন ঘিরে সরকারি কর্মকর্তাদের হুমকি দেওয়ার অভিযোগে এই সংসদ সদস্যের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার কে এম নূরুল হুদা। ঘোষণাটি মঙ্গলবারের। এর কয়েক ঘণ্টা পর বিকালে জাতীয় প্রেসক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলনে নিজেকে নির্দোষ দাবি করে উল্টো নির্বাচনে ‘পক্ষপাতিত্বের’ অভিযোগে ফরিদপুরের জেলা প্রশাসকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানিয়েছেন এই সাংসদ।
ওই অডিওর বক্তব্য তার নয় দাবি করে নিক্সন চৌধুরী সংবাদ সম্মেলনে বলেন, ‘বিভিন্ন সোশ্যাল মিডিয়ায় আমার যে বক্তব্য ও কথা প্রকাশিত হয়েছে, এই বক্তব্য পুরোপুরিভাবে এডিট করা। সকাল ১১টার দিকে আমি টিএনওকে ফোন করেছিলাম যে, আমার একজন কর্মীকে মাঠে দাঁড়িয়ে সিগারেট খাওয়ার অপরাধে ম্যাজিস্ট্রেট এবং বিজিবি ধরে নিয়ে গিয়েছিলো। সেই বিষয়টা অবগত করার জন্যই আমি ফোন করেছিলাম। আর যেটা ছড়ানো হয়েছে সেটা সুপার এডিট করা। আপনারা এখানে দেখতে পারবেন যে টিএনওর সঙ্গে আমার আলাপটা দেওয়া হয়েছে। টিএনও একজন বিসিএস ক্যাডার। যদি আমার সঙ্গে টিএনওর কথা সোশ্যাল মিডিয়ায় দেওয়া হয়, উনি তো আইন সম্পর্কে সব জানেন। হাই কোর্টের সুস্পষ্ট নির্দেশনা আছে, রায় আছে সেখানে কারও ফোনের রেকর্ড সোশ্যাল মিডিয়ায় দেওয়া যাবে না। আমার টিএনও এত বোকা না যে, তিনি আইনের লোক হয়ে আইন ভঙ্গ করে সোশ্যাল মিডিয়াতে এটা দিয়ে ভাইরাল করবে। এখন পর্যন্ত আমার টিএনওর কোনো বক্তব্য কিন্তু আসেনি।
উনার সঙ্গে আমার এ রকম আচরণ করার কোন প্রশ্নই উঠে না। যে অডিও ক্লিপ বানানো হয়েছে এটা পুরো ভিত্তিহীন। আপনারা চরভদ্রাসনের ইউএনকে জিজ্ঞেস করেন, আমি এমন কোন আচরণ করেছি কি না। হ্যাঁ, আমি ফোন করেছিলাম একজনকে ধরে নিয়ে গেছে সেই বিষয়ে। বাকি যে বিষয়টা সেটা পুরাই ভিত্তিহীন এবং এটাকে ভয়েস এডিট করে আমার শত্রু পক্ষ করেছে।’
নিক্সন চৌধুরীর এই বক্তব্য হালকা ভাবে দেখার সুযোগ নেই। তবে এই অডিও তিনি সোশ্যাল মিডিয়ায় দেননি জানিয়ে ঐ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বলেন, ‘এটা সোশ্যাল মিডিয়ায় কিভাবে এসেছে সেটা আমার জানা নেই। আমিও দেখে অবাক হয়েছিলাম। তবে নির্বাচনের দিন দায়িত্বরত সব কর্মকর্তার ফোন নজরদারিতে থাকে।’
সাংসদ নিক্সন চৌধুরীর পরের অভিযোগটা আমার কাছে আরো বেশি অর্থপূর্ণ মনে হয়েছে। তিনি বলেন, ‘এই নির্বাচনে আপনারা খবর নিয়ে দেখবেন বিএনপির বিদ্রোহী প্রার্থী একটা অভিযোগও করে নাই যে তার সাথে কেউ খারাপ আচরণ করেছে, নির্বাচনে কোন বাধা সৃষ্টি করা হয়েছে, কেউ হুমকি দিয়েছে, কেউ কোন ভয়-ভীতি দেখিয়েছে। তাহলে চারজন ম্যজিস্ট্রেটের জায়গায় ইলেকশনের আগের দিন ১৩ জন কেন দেওয়া হলো? তারপরেও ১৩ জন দিয়েছে তাতে সমস্যা নেই। নির্বাচন সুষ্ঠু হয়েছে এর জন্য আমি ধন্যবাদ জানাই। কিন্তু নির্বাচন কমিশনের চারজনকে চাওয়ার চিঠি আছে, ১৩ জনের কি সেই চিঠি আছে?
সারা দিনে বিজিবি নিয়ে ম্যাজিস্ট্রেটরা যে অবস্থা করেছেন, এর মধ্যে একজন জুডিশিয়াল ম্যজিস্ট্রেট। নির্বাচনের দিন সকালে অনেক সেন্টারে নির্বাহী ম্যজিস্ট্রেটরা মারমুখী অবস্থান নেয়। তাতে নিরীহ ভোটাররা ভীত হয়ে পড়ে। অনেক ভোটার ভোট দেওয়ার আগ্রহ হারিয়ে ফেলে। অনেক সেন্টারে নির্বাহী ম্যজিস্ট্রেটের পেশকারদের ভোটকেন্দ্রের ভেতরে বসে থাকতে দেখা যায়।’
পুরো ব্যাপারটাতেই প্রশাসনের অতিউৎসাহ লক্ষ্য করা যাচ্ছে। আর সেই আগুনে ঘি ঢালছে রাজনীতির মাঠ থেকে বিতাড়িত কিছু আধমরা লোকজন।
আজ নিক্সন চৌধুরীকে হেনস্থা করতে এরা যদি সফল হয়; কাল সরকারের বা দলের প্রভাবশালী মন্ত্রী বা নেতাকে ধরবে। দল এবং সরকার দূর্বল হলে সবচেয়ে বেশি লাভ আমলাতন্ত্রের। তাদের সমস্ত আস্ফালন আর অপকর্মের হিসেব নেওয়ার মতন কেউ থাকবে না তখন। মেরুদন্ডওয়ালা মানুষকে বড্ড ভয় যে তাদের। আমার হিসেব পরিস্কার। এবার আপনার হিসেবটা মিলিয়ে নেন।
লেখক: সম্পাদক, বিবার্তা২৪ডটনেট
Posted ৮:৫১ পূর্বাহ্ণ | শুক্রবার, ১৬ অক্টোবর ২০২০
dailymatrivumi.com | Mohammad Salahuddin