চলতি সপ্তাহের মধ্যে আওয়ামী লীগের সবগুলো উপ-কমিটির সদস্যদের নাম জমা দিতে হবে। আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সভায় আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এই নির্দেশনা দিয়েছেন। ৮ টি বিভাগের সাংগঠনিক উপ-কমিটিসহ মোট ১৭টি উপ-কমিটি গঠনের কথা আওয়ামী লীগের গঠনতন্ত্র অনুযায়ী। এই উপ-কমিটিগুলোতে এবার সদস্য সংখ্যা কত হবে- তা সুনির্দিষ্টভাবে বেঁধে দেওয়া হয়েছে। অন্যান্যবারের মতো একেক উপ-কমিটি একেক সংখ্যক সদস্য দিয়ে গঠন করার যে প্রবণতা ছিল, সে প্রবণতা এবার বন্ধ হয়ে গেছে।
এবার সুনির্দিষ্টভাবে বলা হয়েছে যে, প্রতিটি উপ-কমিটিতে ৩৫ জন সদস্য থাকবে। গত ১৫ সেপ্টেম্বর ছিল উপ-কমিটি গঠনের শেষ সময়। ১৫ সেপ্টেম্বরের মধ্যে ১৭টি উপ-কমিটির মধ্যে মাত্র ৬টি উপ-কমিটির প্রস্তাবিত নাম জমা হয়েছিল বলে আওয়ামী লীগের দায়িত্বশীল সূত্রগুলো বলছে। বাকিগুলোর কাজ শেষ হয়ে যাচ্ছে। আওয়ামী লীগের একাধিক সম্পাদকমণ্ডলীর সাথে আলাপ করে জানা গেছে, তারা উপ-কমিটির নাম চূড়ান্ত করে ফেলেছেন এবং আগামী দুই একদিনের মধ্যে উপ-কমিটিগুলোর নামের তালিকা দলের দপ্তর সম্পাদকের কাছে দেওয়া হবে। দপ্তর এই নামের তালিকাটি সাধারণ-সম্পাদকের কাছে দিবেন এবং এটি সম্পাদকমণ্ডলীতে প্রথম আলোচিত হবে।
সম্পাদকমণ্ডলীর আলোচনার প্রেক্ষিতে এই তালিকাটি আওয়ামী লীগ সভাপতির কাছে উপস্থাপন করা হবে। তিনি তার নিজস্ব প্রক্রিয়ার মাধ্যমে এটি যাচাই-বাছাই করে চূড়ান্তভাবে নির্ধারণ করবেন কারা উপ-কমিটিতে থাকছে এবং কারা উপ-কমিটিতে থাকছে না। এখনো পর্যন্ত যে প্রক্রিয়ায় আওয়ামী লীগের উপ-কমিটি তৈরির কাজ চলছে, সেটিতে দেখা গেছে যে, অপেক্ষাকৃত তরুণ এবং প্রাক্তন ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের উপ-কমিটিগুলোতে প্রাধান্য দেওয়া হচ্ছে। এবার ছাত্রলীগ করেনি বা আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে কখনো সম্পৃক্ত ছিল না এ রকম ব্যক্তিদেরকে উপ-কমিটিতে রাখার সুযোগ অনেক কম বলে জানিয়েছেন, আওয়ামী লীগের একাধিক শীর্ষ নেতা।
ইতোমধ্যে যে কমিটিগুলোর নাম প্রস্তাব করা হয়েছে সে কমিটিতে প্রাক্তন ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীদেরকে প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে। আওয়ামী লীগের একজন সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য বলেছেন যে, আওয়ামী লীগ সভাপতি উপ-কমিটি গঠনের ব্যাপারে সুনির্দিষ্ট নির্দেশনা দিয়েছেন। এতে বলাই হয়েছে, প্রাক্তন ছাত্রলীগের নেতৃবৃন্দ যাদেরকে কেন্দ্রীয় কমিটিতে রাখা সম্ভব হয়নি। আবার যারা অন্য সহযোগী সংগঠনের মধ্যেও নেই এই রকম ব্যক্তিদেরকেই উপ-কমিটিতে রাখা হবে। আওয়ামী লীগের একজন শীর্ষ নেতাকর্মী জানিয়েছেন, উপ-কমিটি হল কেন্দ্রীয় নেতৃত্বে প্রবেশদ্বার। এই উপ-কমিটির সদস্যের কার্যক্রম যাচাই-বাছাই করে তাদের পরবর্তীতে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটিতে বা অন্যান্য সহযোগী সংগঠনের নেতৃত্বে আনা হবে। সে কারণেই উপ-কমিটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
আর এখানে এক্ষেত্রে প্রাক্তন ছাত্রলীগ ছাড়াও স্ব স্ব ক্ষেত্রে যারা অবদান রাখছেন, এই রকম প্রতিশ্রুতিশীল ব্যক্তিদেরকেও রাখা হবে। যেমন- আন্তর্জাতিক বিষয়ক উপ-কমিটিতে ছাত্রলীগের বাইরে যারা আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে অবদান রাখছেন, তাদের রাখা হবে। সংস্কৃতি বিষয়ক উপ-কমিটিতে সংস্কৃতি ক্ষেত্রে যারা বিভিন্ন রাখছেন, যারা মুক্তিযুদ্ধের চেতনা লালন করেন এই রকম ব্যক্তিদের রাখা হবে। একাধিক দায়িত্বশীল সূত্রগুলো বলছে এবারের উপ-কমিটি হবে একটু তারুণ্য নির্ভর এবং উপ-কমিটিগুলো যেন সত্যিকার অর্থেই কাজ করে সেদিকে খেয়াল রাখা হবে।
আগের অভিজ্ঞতায় দেখা গেছে যে, উপ-কমিটিগুলো হয়েছিল নাম ভাঙ্গানোর একটি কৌশল হিসেবে। উপ-কমিটির সদস্যরা এই পরিচয় দিয়ে নানা রকম কাজ করত বলে অভিযোগ পাওয়া গিয়েছিল। যার সবচেয়ে বড় উদাহরণ হল প্রতারক সাহেদ সেই ধারাটি বন্ধ করার জন্য এবারের উপ-কমিটির কার্যক্রম মূল্যায়ন করা হবে। এই কার্যক্রমের ভিত্তিতেই উপ-কমিটিতে যারা থাকবেন তাদের ভবিষ্যৎ রাজনৈতিক ভাগ্য নির্ধারিত হতে পারে।
আর সবচেয়ে বড় কথা হচ্ছে, দেখা যায় ছাত্রলীগ করার পর একটি বড় অংশ কোথাও জায়গা পান না। ফলে তারা রাজনৈতিক প্রক্রিয়া থেকে আস্তে আস্তে হারিয়ে যান এবং হতাশার মধ্যে ভুগেন। এই সমস্ত প্রতিভাবান যারা ছাত্র রাজনীতিতে বা যুব রাজনীতিতে অবদান রেখেছেন, তাদেরকেই উপ-কমিটিতে জায়গা দিয়ে দলকে আরও শক্তিশালী করার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে উপ-কমিটি থেকে।
কাজেই আওয়ামী লীগের উপ-কমিটিতে এবার প্রাক্তন ছাত্রলীগের প্রাধান্য থাকবে এবং তারুণ্য নির্ভর উপ-কমিটি হবে, সেটা স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে।
Posted ৫:৩৪ অপরাহ্ণ | শুক্রবার, ১৮ সেপ্টেম্বর ২০২০
dailymatrivumi.com | Mohammad Salahuddin