আফগানিস্তানের দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর কান্দাহারের পর দেশের আরও দুই গুরুত্বপূর্ণ প্রাদেশিক রাজধানী লস্করগাহ ও হেরাত এখন তালেবানের হাতে অবরুদ্ধ। আফগান বাহিনীর সঙ্গে তিনটি শহরেই তুমুল লড়াই চলছে। যে কোনো সময় কট্টরপন্থিদের হাতে এ শহরগুলোর পতন হতে পারে। সশস্ত্র গোষ্ঠীটিকে আটকাতে বিমান হামলা জোরদার করেছে যুক্তরাষ্ট্র ও আফগানিস্তানের সেনাবাহিনী।
সরকারি বাহিনীর জোরালো অভিযান সত্ত্বেও সামনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে তালেবান যোদ্ধারা। আকাশ থেকে বোমা ফেলায় এবং তালেবানের স্থল অভিযানের মধ্যে উভয় সংকটে পড়েছে স্থানীয় বাসিন্দারা। প্রাণ হারাচ্ছেন বেসামরিক লোকজন। লস্করগাহের বাসিন্দাদের বরাত দিয়ে এক খবরে বলা হয়েছে, সেখানে রাস্তায় রাস্তায় ছড়িয়ে-ছিটিয়ে রয়েছে লাশ। এরই মধ্যে মঙ্গলবার মধ্যরাতে রাজধানী কাবুলে প্রতিরক্ষামন্ত্রীর বাসভবনে হামলা চালায় তালেবান। এতে অন্তত আটজন নিহত হয়েছেন। খবর এএফপি, বিবিসি, রয়টার্সের।
আফগানিস্তান থেকে বিদেশি সেনা প্রত্যাহার প্রক্রিয়া চূড়ান্ত করার মধ্যে দেশের বেশিরভাগ এলাকা দখলের নেওয়ার পর প্রাদেশিক রাজধানীগুলোর দিকে নজর দিয়েছে তালেবান। দেশটির অর্থনৈতিক ও প্রশাসনিক দিক দিয়ে সমৃদ্ধ দক্ষিণ ও পশ্চিমাঞ্চলীয় বড় বড় শহরের বেশিরভাগ এলাকা নিজেদের কবজায় নিয়েছে কট্টরপন্থিরা। এরই মধ্যে আফগান বাহিনী লস্করগাহে বিমান হামলার মাধ্যমে তালেবানকে প্রতিরোধের চেষ্টা করছে। অন্যদিকে, গুলির লড়াইও জোরালো করেছে সশস্ত্র গোষ্ঠী। এতে সেখানে ব্যাপক প্রাণহানি হচ্ছে। এমন পরিস্থিতিতে লস্করগাহ থেকে বাসিন্দাদের দ্রুত সরে যাওয়ার আহ্বান জানিয়েছে দেশটির সেনাবাহিনী।
স্থানীয় বাসিন্দা সালেহ মোহাম্মদ বলেন, ‘শত শত পরিবার পালানোর চেষ্টা করলেও সহিংসতা চলায় তারা কোথাও যেতে পারছে না। জীবনের কোনো নিশ্চয়তা নেই, আমরা যে কোনো সময় মারা যেতে পারি। আমাদের তালেবান ও সরকার উভয়ই ধ্বংস করছে।’
লস্করগাহের বাসিন্দারা বলেন, তালেবান তাদের প্রতি সদয় হবে না। আফগান সরকারও বোমা হামলা থামাবে না। রাস্তায় লাশের পর লাশ। তারা তালেবান নাকি বেসামরিক নাগরিক জানা যাচ্ছে না। এক বাসিন্দা বলেন, শহরের সব প্রান্তেই লড়াই চলছে। আমি জানি না কোথায় যাব। এমন প্রেক্ষাপটে তালেবানের বিরুদ্ধে যুদ্ধাপরাধের অভিযোগ করেছে মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইটস ওয়াচ। কট্টরপন্থিদের হাতে আটক সেনা, পুলিশ ও বেসামরিক নাগরিকদের হত্যার অভিযোগ আনা হয়েছে। এর আগে তাদের বিরুদ্ধে একই অভিযোগ করেছে জাতিসংঘ।
মঙ্গলবার কাবুলে প্রতিরক্ষামন্ত্রী বিসমিল্লাহ খান মোহাম্মদির বাড়ি লক্ষ্য করে দুই দফায় হামলা চালানো হয়। পরে মন্ত্রীসহ তার পরিবারের সদস্যরা নিরাপদে রয়েছেন বলে জানায় দেশটির স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। এর পরদিন ওই হামলার দায় স্বীকার করে তালেবানের মুখপাত্র জাবিহুল্লাহ মুজাহিদ বলেন, ভবিষ্যতেও আফগানিস্তানের শীর্ষ সরকারি কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে এমন হামলা চালানো হবে।
অন্যদিকে, যুক্তরাষ্ট্রের আফগানবিষয়ক বিশেষ দূত জালমে খলিলজাদ মঙ্গলবার বলেছেন, বর্তমান পরিস্থিতিতে কোনো সরকার গঠিত হলে তার সিংহভাগ ক্ষমতা নিজেদের হাতে চায় তালেবান। তারা এমনটাই দাবি করছে। তিনি আরও বলেন, তালেবান ও কাবুল সরকার ঐকমত্যে পৌঁছানো থেকে বহু দূরে। তারা একে অপরের হিসেব উল্টে দিতে চাচ্ছে, ঠিক যেমনটি তারা যুদ্ধক্ষেত্রে করছে।
Posted ৬:৪১ পূর্বাহ্ণ | বৃহস্পতিবার, ০৫ আগস্ট ২০২১
dailymatrivumi.com | Mohammad Salahuddin