করোনা মহামারির মধ্যে দেশের স্বাস্থ্য খাতে নানা অনিয়ম ও বিশৃঙ্খলায় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও অধিদফতরের কারা জড়িত, তা চিহ্নিত করা হচ্ছে না, বরং একে অপরকে দোষারোপ করে মন্ত্রণালয় ও অধিদফতর দায় এড়ানোর চেষ্টা চালাচ্ছে। এদিকে বিতর্কের মুখে পদত্যাগ করেছেন স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক (ডিজি) অধ্যাপক ডা. আবুল কালাম আজাদ পদত্যাগ করেছেন।
মঙ্গলবার জনপ্রশাসন সচিবের কাছে তিনি পদত্যাগপত্র জমা দেন। আবুল কালাম আজাদের পদত্যাগপত্র জমা দেওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের সচিব আবদুল মান্নান। স্বাস্থ্য খাতের নানা অনিয়ম নিয়ে তীব্র বিতর্কের মধ্যে তিনি পদত্যাগ করলেন।
জেকেজি হেলথ কেয়ার ও রিজেন্ট হাসপাতাল কেলেঙ্কারির রেশ কাটতে না কাটতেই বেরিয়ে আসে রাজধানীর গুলশানে বেসরকারি সাহাব উদ্দিন মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জালিয়াতি। হাসপাতালটি অনুমতি ছাড়াই করোনাভাইরাসের অ্যান্টিবডি পরীক্ষা করছিল বলে র্যাব জানিয়েছে।
শুধু সাহাব উদ্দিন মেডিকেল নয়, আরও চারটি বেসরকারি পরীক্ষাকেন্দ্রের প্রস্তুতির আগেই স্বাস্থ্য অধিদফতর নমুনা পরীক্ষার অনুমোদন দিয়েছিল।
অভিযোগ রয়েছে, অধিদফতর সরেজমিন পরিদর্শন না করেই এসব কেন্দ্রের অনুমতি দিয়েছে। অভিযোগের সত্যতা পাওয়া যায় স্বাস্থ্য অধিদফতর ১২ জুলাই এক দিনে পাঁচ প্রতিষ্ঠানের করোনাভাইরাস পরীক্ষার অনুমোদন স্থগিত করায়। প্রতিষ্ঠানগুলো হলো কেয়ার মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, সাহাব উদ্দিন মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, স্টেমজ হেলথ কেয়ার, থাইরোকেয়ার ডায়াগনস্টিক এবং চট্টগ্রামের এপিক হেলথ কেয়ার।
স্বাস্থ্য অধিদফতরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক নাসিমা সুলতানা ওই পাঁচ প্রতিষ্ঠানকে দেওয়া চিঠিতে বলেন, ওই হাসপাতাল ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারকে কোভিড-১৯ আরটিপিসিআর ল্যাবরেটরি পরীক্ষার অনুমোদন দেওয়া হলেও তারা কাজ শুরু করতে ব্যর্থ হয়েছে। সে জন্য কোভিড-১৯ আরটিপিসিআর পরীক্ষার অনুমোদন স্থগিত করা হয়েছে।
নিম্নমানের মাস্ক, পিপিইসহ স্বাস্থ্য সরঞ্জাম কেনাকাটায় দুর্নীতির অভিযোগে ওঠে। এসব অভিযোগের এখনও কোনো তদন্ত করে শাস্তি হয়নি। এদিকে করোনা পরীক্ষায় এমন জালিয়াতি ও অনিয়মের কারণে ২৩ জুলাই থেকে বাংলাদেশ থেকে আকাশপথে বিদেশগামী যাত্রীদের জন্য কোভিড-১৯ পরীক্ষার সনদ বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। বাংলাদেশ বিমানের ওয়েবসাইটে ১৬টি প্রতিষ্ঠানের নাম উল্লেখ করে বলা হয়েছে, এসব কেন্দ্রে কোভিড-১৯ পরীক্ষা করাতে হবে। এই ১৬ কেন্দ্রের মধ্যে কোনো বেসরকারি হাসপাতাল বা পরীক্ষাকেন্দ্র নেই।
বর্তমানে দেশের ৮০টি ল্যাবে করোনা শনাক্তকরণ পরীক্ষা করা হচ্ছে। এর মধ্যে ৩৫টি বেসরকারি হাসপাতাল ও ক্লিনিক। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, অনেক প্রতিষ্ঠানের মান বা তাদের সক্ষমতার বিষয়টি অধিদফতর সরেজমিন পরিদর্শন করে যাচাই-বাছাই করেনি।
বাংলাদেশ থেকে যাওয়া বেশ কয়েকজন যাত্রীর করোনা ধরা পড়ার পর ঢাকা থেকে জাপান, কোরিয়া ও ইতালির ফ্লাইট বন্ধ হয়। বিদেশে যাওয়ার পর বিমানবন্দরেই প্রবাসী বাংলাদেশিদের শরীরে করোনা শনাক্ত হওয়ার বিষয়টি নিয়ে বিভিন্ন দেশের গণমাধ্যমে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। এতে বাংলাদেশের করোনা পরীক্ষার মান নিয়ে প্রশ্ন দেখা দেয়।
স্বাস্থ্য অধিদফতরের অনুমতি নিয়ে গত ১৩ এপ্রিল থেকে জেকেজি হেলথ কেয়ার বুথের মাধ্যমে করোনা শনাক্তের নমুনা সংগ্রহ শুরু করে। কিন্তু জেকেজির বিরুদ্ধে বাসা থেকে টাকার বিনিময়ে নমুনা সংগ্রহ এবং পরীক্ষা ছাড়াই নমুনার ফল দেওয়ার অভিযোগ ওঠে।
স্বাস্থ্য খাতে অনিয়মের ঘটনায় এখনও স্বাস্থ্য বিভাগের কারও বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।
এ প্রসঙ্গে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের সচিব মো. আবদুল মান্নান বলেন, অনিয়মের সঙ্গে কোনো কর্মকর্তা জড়িত থাকলে অবশ্যই তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ইতোমধ্যে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) বেশ কয়েকটি অনিয়মের তথ্য-উপাত্ত নিয়ে কাজ শুরু করেছে।
Posted ৩:৪৭ পূর্বাহ্ণ | বৃহস্পতিবার, ২৩ জুলাই ২০২০
dailymatrivumi.com | Mohammad Salahuddin