খ্যাতিমান জাদুশিল্পী জুয়েল আইচ এখন আছেন সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালের (সিএমএইচ) নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ)। চিকিৎসকদের বরাত দিয়ে তাঁর স্ত্রী বিপাশা আইচ জানিয়েছেন যে তিনি তৃতীয়বারের মতো করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন।
শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের ২০৫ নম্বর কেবিনে ভর্তি আছেন ওই হাসপাতালের চিকিৎসক ফরহাদ হোসেন। তিনি দ্বিতীয় দফায় করোনা আক্রান্ত হয়েছেন বলে জানিয়েছেন। একই হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগের ডা. নিহার তিন দফা করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন বলে জানিয়েছেন হাসপাতালের কর্মকর্তারা।
শুধু এই তিনজনই নন, এমন আরো বেশ কিছু ঘটনার তথ্য আছে সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগ নির্ণয় ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (আইইডিসিআর) কাছে। একই রকম কিছু তথ্য নিয়ে কাজ করছেন আন্তর্জাতিক উদরাময় রোগ গবেষণা কেন্দ্র বাংলাদেশের (আইসিডিডিআরবি) গবেষকরা। তবে দেশের রোগতত্ত্ববিদ ও অণুজীব বিজ্ঞানীরা জোর দিয়েই বলছেন, এর কোনোটিই যে রি-ইনফেকশন বা একই ব্যক্তির শরীরে পুনরায় করোনাভাইরাস সংক্রমণ, তার কোনো বৈজ্ঞানিক প্রমাণ পাওয়া যায়নি। শুধু বাংলাদেশেই নয়, বিশ্বের অন্যান্য দেশেও এমন যে ঘটনাগুলো ঘটেছে, সেগুলোও রি-ইনফেকশন বলে প্রমাণ পাওয়া যায়নি। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাও এখন পর্যন্ত করোনাভাইরাসের রি-ইনফেকশনের বিষয়টি স্বীকার করছে না।
শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের চিকিৎসক ফরহাদ হোসেন বলেন, ‘আমি প্রথমে গত মে মাসে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছিলাম। পরে ২১ দিন ও ২৮ দিন পর দুই দফা পরীক্ষায় রিপোর্ট নেগেটিভ আসে। আমি নিশ্চিত ছিলাম আর হয়তো আক্রান্ত হব না। নিয়মিত হাসপাতালে ডিউটি করেছি, রোগী দেখেছি। এর মধ্যে গত সোমবার হঠাৎ করেই জ্বর ওঠে। সঙ্গে শরীর ব্যথাসহ করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার অন্যসব উপসর্গই দেখা দেয়। পরদিনই ডেঙ্গু টেস্ট করি এবং একই দিন করোনাভাইরাসের টেস্ট করি। এর মধ্যে ডেঙ্গুর নেগেটিভ ও করোনার পজিটিভ রিপোর্ট এসেছে। আগের বারের চেয়ে আমার উপসর্গ খুবই জটিল হচ্ছে। আমি এখন হাসপাতালে ভর্তি আছি। প্রচণ্ড কাশি, শরীর ব্যথা আছে। আমি নিজে ডাক্তার হয়েও এখন রি-ইনফেকশনের বিষয়ে সংশয়ে পড়ে গেছি।’
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আইসিডিডিআরবির একজন জ্যেষ্ঠ বিজ্ঞানী বলেন, তাঁদের হাতেও বেশ কিছু রিপোর্ট এসেছে। তাঁরা এগুলো নিয়ে কাজ করছেন। এগুলো আদৌ রি-ইনফেকশন নাকি পুরনো মৃত ভাইরাসের পুনরুজ্জীবন, সেটা পরিষ্কার হতে পারছেন না। এ নিয়ে গবেষণার সুযোগও দেশে এখন পর্যন্ত খুবই সীমিত।
আইইডিসিআরের পরিচালক অধ্যাপক ড. তাহমিনা শিরীন ক বলেন, ‘আমাদের হাতে চার-পাঁচটি ঘটনার তথ্য রয়েছে। কিন্তু আমরা কিছু সীমাবদ্ধতার কারণে পূর্ণাঙ্গ কোনো গবেষণা করতে পারছি না। এ নিয়ে উপযুক্ত সিকোয়েন্সিংও করা যাচ্ছে না। রি-এজেন্ট যেমন নেই, তেমনি যারা আগের দফায় আক্রান্ত হয়েছিল তখনকার নমুনাও পাওয়া যায়নি। সাধারণত পরীক্ষার পর রিপোর্ট হয়ে গেলে সেই নমুনা নষ্ট করে ফেলা হয়। কারণ লাখ লাখ নমুনা সংরক্ষণ করা সম্ভব নয়।’
ওই কর্মকর্তা বলেন, এখন যদি দেশে সংক্রমণ বেড়ে যায় তাহলে একটি বাড়তি সমস্যা হতে পারে। তা হচ্ছে প্রথমবারের মতো আক্রান্ত আর একাধিকবার আক্রান্ত মিলে এক ধরনের জটিলতা তৈরির আশঙ্কা রয়েছে। বিষয়টি নিয়ে তাঁরা কিছুটা উদ্বেগের মধ্যে আছেন।
অণুজীব বিজ্ঞানী ড. সমীর কুমার সাহা বলেন, ‘কিছু কিছু ঘটনা আমরাও জানি। কিছু নমুনা নিয়ে আমরাও গবেষণা চালাচ্ছি। এই কাজ শেষ না হওয়া পর্যন্ত সঠিকভাবে কিছু বলা যাচ্ছে না।’
ওই বিজ্ঞানী বলেন, রি-ইনফেকশন হচ্ছে কি না সেটা পরীক্ষার জন্য আবারও ঘুরেফিরে সেই অ্যান্টিবডি টেস্টের গুরুত্ব বেড়ে গেছে। অ্যান্টিবডি টেস্ট দিয়ে জানার সুযোগ তৈরি হবে যেসব রি-ইনফেকশনের ঘটনা উঠে আসছে, সেগুলো আসলেই কি রি-ইনফেকশন, নাকি অন্য কিছু। এ ছাড়া জিনোম সিকোয়েন্সিংয়ের কাজও চালিয়ে যাচ্ছেন তাঁরা। গতকাল কুর্মিটোলা হাসপাতালে এক অনুষ্ঠানে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক বলেন, বিদেশফেরত যাত্রীদের অবশ্যই করোনা নেগেটিভ সনদ সঙ্গে আনতে হবে। তা না হলে দেশে এলেই বাধ্যতামূলক ১৪ দিনের হোম কোয়ারেন্টিনে থাকতে হবে।
Posted ৩:৪২ পূর্বাহ্ণ | সোমবার, ১৬ নভেম্বর ২০২০
dailymatrivumi.com | Mohammad Salahuddin