বাংলাদেশ রেলওয়ের নিয়োগ পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁসের সঙ্গে জড়িত সরকারি কর্ম কমিশনের (পিএসসি) কর্মকর্তাসহ বেশ কয়েকজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। বাকিদের গ্রেফতারে অভিযান চালানো হচ্ছে।
মামলার তদন্তসংশ্লিষ্ট সূত্রে এ তথ্য নিশ্চিত হওয়া গেছে। জানা গেছে, পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি) প্রশ্নপত্র ফাঁসের সঙ্গে জড়িতদের তালিকা তৈরি করছে।
সিআইডি সূত্রে জানা গেছে, ফাঁস করা প্রশ্নে রেলওয়ের উপসহকারী প্রকৌশলী পদে নিয়োগ পরীক্ষায় শতাধিক চাকরিপ্রার্থী অংশ নিয়েছিলেন।
এর আগে, রেলওয়ের ‘উপসহকারী প্রকৌশলী’ পদে নিয়োগ পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁসের সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে ১৭ জনকে গ্রেফতার করা হয়। পরে পল্টন থানায় তাদের বিরুদ্ধে সরকারি কর্ম কমিশন আইনে মামলা করে সিআইডি।
এরপরই বেরিয়ে আসে চাঞ্চল্যকর তথ্য। জানা যায়, এই চক্রটি শুধু রেলওয়ের নিয়োগ পরীক্ষার প্রশ্নপত্র নয়, গত দেড় যুগের বেশি সময় বিসিএস ক্যাডারসহ নন-ক্যাডারের অন্তত ৩০টি নিয়োগ পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁসে জড়িত।
গ্রেফতারদের ১৭ জনের মধ্যে রয়েছেন- সরকারি কর্ম কমিশনের (পিএসসি) উপপরিচালক জাহাঙ্গীর আলম, আবু জাফর, সহকারী পরিচালক এস এম আলমগীর কবির, ডেসপাচ রাইডার খলিলুর রহমান, অফিস সহায়ক সাজেদুল ইসলাম, পিএসসির সাবেক গাড়িচালক সৈয়দ আবেদ আলী, সাবেক সৈনিক নোমান সিদ্দিকী।
মামলার তদন্তসংশ্লিষ্ট সিআইডির একাধিক কর্মকর্তা বলেন, রেলওয়ের নিয়োগ পরীক্ষায় প্রশ্নপত্র ফাঁসের সঙ্গে জড়িত বাকিদের গ্রেফতারে অভিযান চলছে। যারা ফাঁস হওয়া প্রশ্নে পরীক্ষায় অংশ নিয়েছিলেন, তাদের বিষয়ে তথ্যপ্রমাণ সংগ্রহ করা হচ্ছে।
তারা আরো বলেন, গ্রেফতার চক্রের কাছ থেকে ঐ চাকরিপ্রার্থীদের অনেকের বিভিন্ন অঙ্কের বেশকিছু ব্যাংকের চেক উদ্ধার করা হয়েছে। তাদেরও গ্রেফতার করা হবে। এরপর অন্যান্য নিয়োগ পরীক্ষায় প্রশ্নপত্র ফাঁস হওয়ার যে তথ্য পাওয়া গেছে, সে বিষয়েও তদন্ত করা হবে।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা সিআইডির বিশেষ পুলিশ সুপার মুহম্মদ তৌহিদুল ইসলাম বলেন, এর আগে মেডিকেলের ভর্তি পরীক্ষায় ফাঁস করা প্রশ্নে পরীক্ষা দিয়ে যারা চিকিৎসক হয়েছিলেন, এমন অনেককে গ্রেফতার করা হয়।
গ্রেফতার ব্যক্তিদের জিজ্ঞাসাবাদে সিআইডি জানতে পারে, প্রথমে পিএসসির উপপরিচালক আবু জাফর বিভিন্ন নিয়োগ পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁস করতেন। পরে তার চক্রের সদস্যদের হাতে তুলে দিতেন। পিএসসির অফিস সহায়ক সাজেদুল ইসলাম তার (আবু জাফর) কাছ থেকে প্রশ্নপত্র কিনে সহযোগী শাখাওয়াত হোসেন ও তার ছোট ভাই সাইম হোসেনকে দিতেন। তারা দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে চাকরিপ্রার্থী সংগ্রহ করতেন। এ ছাড়া সাজেদুল পিএসসির একজন সদস্যের কক্ষের ট্রাংক থেকেও প্রশ্নপত্র সংগ্রহ করেছিলেন। শাখাওয়াত ও সাইম নিয়োগ পরীক্ষা শুরু হওয়ার দু-এক দিন আগে ঢাকা এবং ঢাকার বাইরে বাসা ও হোটেল ভাড়া করে চাকরিপ্রার্থীদের কাছ থেকে টাকা নিয়ে প্রশ্নপত্র ও উত্তর বিতরণ করতেন।
আর চাকরিপ্রত্যাশী সংগ্রহের পাশাপাশি ফাঁস করা প্রশ্ন পিএসসির সাবেক গাড়িচালক আবেদ আলীর কাছে বিক্রি করতেন সাজেদুল। আবেদ আলী চাকরিপ্রার্থীদের কাছ থেকে মোটা অঙ্কের টাকা নিয়ে ভাড়া ঘরে রেখে (চক্রের সদস্যদের ভাষায় বুথ) প্রশ্নের উত্তর মুখস্থ করাতেন।
আবেদ আলী জিজ্ঞাসাবাদে সিআইডির কর্মকর্তাদের জানিয়েছেন, আবু সোলায়মান ওরফে সোহেল চাকরিপ্রার্থী সরবরাহ ও বুথ পরিচালনা করতেন।
Posted ৮:৪১ পূর্বাহ্ণ | রবিবার, ১৪ জুলাই ২০২৪
dailymatrivumi.com | Mohammad Salahuddin