চট্টগ্রামের আনোয়ারা উপজেলার রায়পুর ইউনিয়নের গ্রামটির নাম দক্ষিণ গহিরা। এ গ্রামের বাসিন্দারা বছরে অন্তত ছয় মাস যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন থাকেন। ফলে সেখানে গড়ে উঠেনি তেমন কোনো অবকাঠামো, রাস্তা-ঘাট। শিক্ষা ও চিকিৎসা সেবাসহ প্রায় সব ধরনের নাগরিক সুবিধা থেকে বঞ্চিত এই গ্রামের মানুষ।
উপজেলার অন্যান্য গ্রামের সঙ্গে এই গ্রামের যোগাযোগ ব্যবস্থা এতই খারাপ যে, গ্রামটিতে কেউ আত্মীয়তা গড়তে চান না!
সংশ্লিষ্ট ও স্থানীয়রা জানায়, উপজেলার রায়পুর ইউনিয়নের দক্ষিণ গহিরা গ্রামের জনসংখ্যা প্রায় ৩ হাজার,পরিবার রয়েছে অন্তত ২৬০টি। উপজেলা সদর থেকে এ গ্রামের দূরত্ব ১৮ কিলোমিটারের বেশি।
বঙ্গোপসাগরবেষ্টিত গ্রামটিতে পাকা রাস্তা বলে কিছু নেই। ভাঙাচোরা যে কাঁচা রাস্তা রয়েছে সেটিও তলিয়ে যায় প্রতি বর্ষায়। সামান্য বৃষ্টিতে শুকনো মৌসুমেও রাস্তাটি চলাচলের অযোগ্য হয়ে পড়ে। শীত-বসন্তে বিলের জমির ওপর দিয়ে চলে কিছু সংখ্যক অটোরিকশা। বাকি ছয় মাস থাকে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন।
এ গ্রামে একটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থাকলেও নিয়মিত পাঠদান হয় না। গ্রামটিতে নেই কোনো স্বাস্থ্যকেন্দ্র, ফলে যে কোনো সমস্যায় প্রাথমিক চিকিৎসাসেবা পাবারও সুযোগ নেই। গর্ভবতী মায়েদের সম্ভাব্য বিপদ এড়াতে অন্তত এক মাস পূর্বেই উপজেলা বা জেলা হাসপাতালে ভর্তি রাখতে হয়।
অনেকে অসচেতনতার কারণে দোলনায় করে তিন কিলোমিটার পথ পারি দিয়ে রোগীদের গাড়িতে তোলেন। সব মিলিয়ে গ্রামটির সার্বিক পরিস্থিতি এতটাই খারাপ যে, এ গ্রামে কেউ ছেলেমেয়েদের বিয়েও দিতে চান না।
সরেজমিনে দেখা গেছে, গ্রামটির পশ্চিম পাশে বার আউলিয়া এলাকায় খোলা বেড়িবাঁধ দিয়ে জোয়ারের পানি উঠানামার কারণে রাস্তাঘাট বিধ্বস্ত হয়ে পড়েছে। বার আউলিয়া থেকে ঘাটকুল, ঘাটকুল থেকে ফকিরহাট এ দুটি কাঁচা রাস্তা জমির সঙ্গে বিলীন হয়ে গেছে।
রাস্তা দুটির কয়েক স্থানে খালের সৃষ্টি হওয়ায় সেখানে স্থানীয়রা সাঁকো বসিয়ে চলাফেরা করছে। গ্রামের একমাত্র বিদ্যালয়টির যাতায়াত মাধ্যম রাস্তাতেও সাঁকো বসানো হয়েছে। এতে করে ওই বিদ্যালয়ে ছাত্র-ছাত্রীর উপস্থিতির সংখ্যা কমে গেছে।
দক্ষিণ গহিরা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতি মো. আমানুল হক বলেন, রাস্তাঘাটের কারণে শিক্ষকরা বিদ্যালয়ে আসতে চান না। বেশিরভাগ সময় তারা বিদ্যালয়ে অনুপস্থিত থাকেন। বিদ্যালয়টি মেরামতের জন্য দুইবার কাজ পেয়েও রাস্তাঘাট খারাপ অজুহাতে সংশ্লিষ্ট ঠিকাদার কাজ করেননি।
স্থানীয় আবুল হাসেম বলেন, আমাদের গ্রামে আসার কোনো রাস্তা নেই। কেউ অসুস্থ হলে চিকিৎসার জন্য নেই স্বাস্থ্যকেন্দ্র। সব মিলিয়ে আমাদের গ্রামে কেউ আত্মীয়তা করতে চায় না। তাই আমাদের কোনো মেয়ে-বোন বা সন্তানদের বিয়ে দিতে কষ্ট হয়।
গ্রামটির এক স্কুলছাত্রী বলেন,বর্ষা মৌসুমের ছয় মাস আমরা ঠিকমতো স্কুলে যেতে পারি না। তখন রাস্তার কাদা মাড়িয়ে আর সাঁকো পার হয়ে স্কুলে যেতে হয়। আবার স্কুলে যাওয়ার সময় বৃষ্টি নামলে বই-খাতা ভিজে যায়।
রায়পুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো.জানে আলম বলেন, এ গ্রামের সড়কগুলো মেরামত করা হলেও সাগরের জোয়ারের পানি উঠানামার কারণে এসব সড়ক ভেঙে যায়। তাই বেড়িবাঁধের কাজ সম্পন্ন না হওয়া পর্যন্ত সড়কগুলো টিকিয়ে রাখা সম্ভব নয়। বেড়িবাঁধের কাজ চলমান রয়েছে। এরপর গ্রামটির উন্নয়ন কাজ করা হবে।
এ ব্যাপারে আনোয়ারা উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান তৌহিদুল হক চৌধুরী বলেন, গহিরা গ্রামটি উন্নয়নের দিক দিয়ে অনেকটা পিছিয়ে রয়েছে। এ গ্রামকে কিভাবে উন্নয়ন করা যায় সে পরিকল্পনা নিয়ে কাজ করা হবে।
Posted ৪:০০ পূর্বাহ্ণ | রবিবার, ২৬ জুলাই ২০২০
dailymatrivumi.com | Mohammad Salahuddin