শাজাহান খান মনে করেন, করোনাকালে বাসভাড়া বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত এবং এখন ভাড়া কমানোর দাবি—দুটোই সঠিক। স্বীকার করে নিলেন, বাড়তি ভাড়া নেওয়ার ক্ষেত্রে যে শর্ত দেওয়া হয়েছিল অনেক পরিবহনই সেটা মানেনি। বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশনের সভাপতির দায়িত্বে থাকা এই সংসদ সদস্যের সাক্ষাৎকার।
প্রশ্ন : করোনাকালে বাসভাড়া বাড়ানোর সিদ্ধান্তটাকে কি আপনি সঠিক মনে করেন?
শাজাহান খান : আমি মনে করি সঠিক ছিল, কারণটা হলো, সেই সময়ে দেখা গেছে ইজি বাইক, হিউম্যান হলার, নছিমন, করিমন চলাচল করেছে। ওই সব যানবাহনে স্বাস্থ্যবিধির কোনো বালাই ছিল না। তবু প্রয়োজনের তাগিদে মানুষকে যেতে হয়েছে। কত দিন মানুষ ঘরে বসে থাকবে? জীবিকার কারণে যেতে হয়েছে। নিকটজনের মৃত্যুসংবাদ পেয়ে যেতে হয়েছে। আমি জানি জনপ্রতি তিন হাজার টাকা ভাড়া দিয়ে হিউম্যান হলার নিয়ে মানুষ ঢাকা থেকে বগুড়া গেছে, যেখানে বাসের ভাড়া মাত্র ৭০০ টাকা। দেশে এমন অবস্থা সৃষ্টি হওয়ার পর সরকার গণপরিবহন চালানোর কথা চিন্তা করে এবং মালিক ও শ্রমিক নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করে। সভায় সিদ্ধান্ত হয় প্রতি দুই সিটে একজন করে যাত্রী বহন করতে হবে এবং সব রকমের স্বাস্থ্যবিধি মেনে যাত্রী বহন করতে হবে। সরকারের পক্ষ থেকে এ শর্ত দেওয়ার পর বাস মালিকরা বাসভাড়া ৮০ শতাংশ বাড়িয়ে দেওয়ার দাবি তোলে। তাদের ৮০ শতাংশের দাবি নাকচ করে সড়ক ও সেতু মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের শর্ত মেনে বাস চালানোর জন্য শতকরা ৬০ ভাগ ভাড়া বাড়িয়ে দেন। ওই ভাড়া বাড়ানো যৌক্তিক ছিল, কারণ একজন বাস মালিকেরও তো টিকে থাকতে হবে। শ্রমিকের বেতন পরিশোধ করতে হবে। সরকারের বাসভাড়া বাড়ানো-কমানোর বিষয়ে একটি কমিটি রয়েছে, ওই কমিটিতে সরকার, বাস মালিক ও শ্রমিক প্রতিনিধিরা রয়েছেন। তাঁদের সুপারিশ অনুসারে সেই সময়ে বাসভাড়া বাড়ানো হয়।
প্রশ্ন : মানলাম এটা যৌক্তিক সিদ্ধান্ত, কিন্তু মালিকরা তো শর্ত মানেনি?
শাজাহান খান : এটা ঠিক অনেক পরিবহন শর্ত মানেনি। তবে এটা ঘটেছে শেষের দিকে, বিশেষ করে ঈদের সময়ে। ঈদের সময়ে যাত্রীর চাপ ছিল। বাস মালিকরাও এ সুযোগ নিয়েছে। স্বাস্থ্যবিধি দেখার জন্য একটি মনিটরিং কমিটি ছিল, তারাও বিষয়টি ঠিকমতো মনিটরিং করেনি। আবার শুধু বাসেরটা দেখলেও হবে না। লঞ্চ, ইজি বাইক, হিউম্যান হলার—তারাও কেউ স্বাস্থ্যবিধি মানেনি। আরেকটি বিষয়ও ভাবতে হবে, মানুষ জীবনের ঝুঁকি নিয়ে কখন যাতায়াত করে, যখন তার প্রয়োজনটা তীব্র হয়ে দেখা দেয়। প্রয়োজনের তাগিদে মানুষ স্বাস্থ্যবিধি ভেঙে বাসে গেছে। মায়ের সঙ্গে দেখা করতে ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর খেয়া না পেয়ে নদী সাঁতরে বাড়ি গিয়েছিলেন। এটাই হচ্ছে বাস্তবতা। আমি এখন গ্রামে আছি, মাস্ক দিচ্ছি, তার পরও শতকরা ৫ জন লোকও মাস্ক পরছে না। তাদের করোনা আছে কি না জানি না, তবে কারো মৃত্যুর খবর পাইনি। এই লোকগুলো যখন বাসে শহরে যায় তার কাছে স্বাস্থ্যবিধি ফ্যাক্টর হয় না।
প্রশ্ন : এখন যে বাসভাড়া কমানোর কথা হচ্ছে, এর সঙ্গে কি কোনো শর্ত থাকবে নাকি যে রকম ইচ্ছা সে রকমভাবেই বাস চালানো যাবে?
শাজাহান খান : বিআরটিএ বাসভাড়া কমানোর একটি প্রস্তাব মন্ত্রিপরিষদে পাঠিয়েছে। তারা বাস মালিক ও শ্রমিক প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠক করেছে। মন্ত্রিপরিষদ কোনো শর্ত দেবে কি না তা এখনই বলা যাচ্ছে না। তবে বাস মালিকদের দাবি বর্ধিত ভাড়া কমিয়ে তাদের প্রতি আসনে যাত্রী বহনের সুযোগ দেওয়া হোক। এখন তো বাস মালিকরা বর্ধিত ভাড়াও নিচ্ছে, আবার শর্তও মানছে না। তার চেয়ে ভাড়া কমিয়ে তাদের সব আসনে যাত্রী বহনের সুযোগ দেওয়াটাই যৌক্তিক মনে করি।
প্রশ্ন : তাহলে স্বাস্থ্যবিধির কী হবে?
দেখুন আগেই বলেছি মানুষের প্রয়োজনেই মানুষ স্বাস্থ্যবিধি ভাঙতে বাধ্য হচ্ছে। জীবিকার তাগিদে যে মানুষ বের হয় তাকে আপনি আটকে রাখতে পারবেন না। সে বাস না পেলে অন্য পথে বেরোবে, সেই পথ বরং আরো ঝুঁকিপূর্ণ। এ ছাড়া শুধু বাস দিয়ে তো আর স্বাস্থ্যবিধি রক্ষা হবে না, স্বাস্থ্যবিধি মানার আরো বহু ফ্যাক্টর রয়েছে। এখন দেখি মন্ত্রিপরিষদ কী সিদ্ধান্ত নেয়। তবে আবারও বলি, এখন বাস মালিকরা ভাড়াও বেশি নিচ্ছে, আবার স্বাস্থ্যবিধিও মানছে না—এটা হয় না।
প্রশ্ন : এই সুযোগে আবার লক্কড়ঝক্কড় বাস চলা শুরু হবে না তো!
শাজাহান খান : না, স্পষ্ট বলতে পারি তা হবে না। সড়ক পরিবহনে শৃঙ্খলা বজায় রাখার বিষয়ে আমরা কঠোর অবস্থান নিয়েছি। সড়কে শৃঙ্খলা বজায় রাখতে একটি কমিটি রয়েছে। ওই কমিটিতে বাস মালিক ও শ্রমিক প্রতিনিধিরা রয়েছেন। কমিটির সভাপতি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। দুই দিন আগে আমরা বৈঠক করেছি, কোনোভাবেই সড়কে বিশৃঙ্খলা হতে দেব না। ফিটনেসবিহীন গাড়ি সড়কে চলবে না। সড়কে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে আমি ১১১ দফা সুপারিশ দিয়েছি। কমিটি তা গ্রহণ করেছে। আমরা সেই সুপারিশ বাস্তবায়ন করব। দেখুন আগে ট্রাকগুলোতে বড় বড় বাম্পার ছিল, সেগুলো এখন নেই, আমরা তাদের সিদ্ধান্ত মানাতে বাধ্য করেছি।
প্রশ্ন : আমাদের দেশে একটা সাধারণ ধারণা যে একবার ভাড়া বাড়লে সেটা আর কমে না। এবারও শেষ পর্যন্ত সে রকম কিছু হবে না তো?
শাজাহান খান : আমরা কমাতে বাধ্য করব। এ ছাড়া এবার বাসভাড়া কমানোর দাবি তুলেছে বাস মালিকরা। তার পরও কেউ বেশি ভাড়া নিলে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এখানে বাস মালিক, শ্রমিক এবং সরকার তিন পক্ষই যুক্ত।
Posted ৫:৫০ পূর্বাহ্ণ | শুক্রবার, ২১ আগস্ট ২০২০
dailymatrivumi.com | Mohammad Salahuddin