ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের (ডাকসু) সহ-সভাপতি ভিপি নুরুল হক নুরে বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগে মামলা দায়ের করেছেন ঢাবির এক শিক্ষার্থী। রোববার (২০ সেপ্টেম্বর) রাতে ওই ছাত্রী রাজধানীর লালবাগ থানায় মামলাটি দায়ের করেন।
সোমবার দুপুরে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন লালবাগ থানার ওসি কে এম মুস্তাফিজ। তিনি বলেন, রোববার রাতে ভুক্তভোগী ওই শিক্ষার্থী ভিপি নুরের নামে ধর্ষণের একটি অভিযোগ দায়ের করেন। আমরা বিষয়টি তদন্ত করে দেখছি। বিস্তারিত পরে জানানো হবে।
পুলিশের লালবাগ বিভাগের উপ-কমিশনার বিপ্লব বিজয় তালুকদার বলেন, ‘ধর্ষণের ঘটনা পরম্পরায় ভিপি নুরের নাম উঠে আসায় তাকে সহযোগী হিসেবে আসামি করা হয়েছে। পুলিশ এ ঘটনার তদন্ত করছে আমরা বিষয়টি তদন্ত করে দেখছি।
২০১৩-১৪ শিক্ষাবর্ষের ইংরেজি বিভাগের ছাত্র নুর আলোচনায় আসেন কোটা সংস্কার আন্দোলনের মাধ্যমে। এই আন্দোলন তাকে দেশব্যাপী ব্যাপক পরিচিতি এনে দেয়। এরপর তিনি বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদ নামে একটি সংগঠনের ব্যানারে ডাকসু নির্বাচন করে ভিপি নির্বাচিত হন। সম্প্রতি তিনি একটি নতুন রাজনৈতিক দলও গঠন করেছেন।
মামলার ব্যাপারে নূরের সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগ করলেও তিনি কল রিসিভ করেননি। ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের যুগ্ম আহ্বায়ক রাশেদ খানের সঙ্গে যোগাযোগ করলে তিনি বলেন, আমরা এখনো এ বিষয়ে কিছু জানি না।
এর আগে ২০১৯ সালে ডাকসু নির্বাচন চলাকালীন রোকেয়া হলের প্রভোস্টকে লাঞ্ছিত ও ভাঙচুরের অভিযোগে নুরুল হকসহ ৫ জনের বিরুদ্ধে মামলা হয়।
নূরের পরিচয়:
নুরুল হক নুর বরিশাল বিভাগের পটুয়াখালী জেলার গলাচিপা উপজেলার বৃহত্তর চর কাজল ইউনিয়নে (বর্তমান চর বিশ্বাস ইউনিয়নে) জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবা ইদ্রিস হাওলাদার একজন ব্যবসায়ী এবং সাবেক ইউনিয়ন পরিষদ সদস্য এবং মায়ের নাম নিলুফা বেগম। তিন ভাই ও পাঁচ বোনের মধ্যে নূর দ্বিতীয়।
নূরের লেখাপড়া:
নূর পটুয়াখালীর চর বিশ্বাস জনতা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে সপ্তম শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশুনা করেন। এরপর গাজীপুরের কালিয়াকৈর গোলাম নবী মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের বিজ্ঞান বিভাগ থেকে ২০১০ সালে মাধ্যমিক এবং ঢাকার উত্তরা হাই স্কুল অ্যান্ড কলেজ থেকে ২০১২ সালে উচ্চ মাধ্যমিক সম্পন্ন করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগে ২০১৩–১৪ শিক্ষাবর্ষে ভর্তি হন।
নূরের ছাত্র আন্দোলন:
নুরুল হক নূর বাংলাদেশের অন্যতম আলোচিত ছাত্র আন্দোলন কোটা সংস্কার আন্দোলনের সময় বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের অন্যতম যুগ্ম-আহ্বায়ক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।
নূরের ছাত্র রাজনীতি:
এর আগে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রলীগের মুহসিন হলের উপ-মানব উন্নয়ন বিষয়ক সম্পাদক ছিলেন। স্কুল জীবনে তিনি ছাত্রলীগের স্কুল কমিটির দপ্তর সম্পাদক ছিলেন। এছাড়াও তিনি বিতর্ক, অভিনয়সহ বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত।
ভিপি নূর:
২০১৮ সালের কোটা সংস্কার আন্দোলনের সময় বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের অন্যতম যুগ্ম-আহ্বায়ক হিসেবে তিনি আলোচনায় আসেন। তিনি ২০১৯ সালের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের (ডাকসু) নির্বাচনে সহ-সভাপতি (ভিপি) নির্বাচিত হন।
জুন ২০২০ সালে নুর তরুণদের নেতৃত্বে একটা নতুন রাজনৈতিক দল তৈরি করার ব্যাপারে প্রকাশ্যে ঘোষণা দেন।
নূরের ওপর ১০ বার হামলা:
২২ ডিসেম্বর ২০১৯ সালে ভারতের নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন ও জাতীয় নাগরিক নিবন্ধনের বিরুদ্ধে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের প্রতি সংহতি জানিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে সমাবেশের কর্মসূচি দেয় নুরুল হক নূর। ওই সমাবেশে মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চের নেতাকর্মীরা বাধা দিতে গেলে সংঘর্ষ বাধে। সংঘর্ষে দু’পক্ষের ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া হয়। একপর্যায়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ ভবনে নূর ও তার সংগঠন বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদ সদস্যদের ওপর মুক্তিযোদ্ধা মঞ্চের কর্মীরা হামলা করে। এতে নূরসহ তার সংগঠনের একাধিক ছাত্র আহত হয়।
২৪ ডিসেম্বর ২০১৯ সালে পুলিশ বাদী হয়ে শাহবাগ থানায় মামলা দায়ের করে এবং হামলার সাথে জড়িত থাকার অভিযোগে মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চের তৎকালীন সাধারণ সম্পাদক আল মামুন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সাধারণ সম্পাদক ইয়াসিন আরাফাত তূর্য এবং দপ্তর সম্পাদক মেহেদী হাসান শান্তকে গ্রেফতার করা হয়।
২০১৯ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত নুরু বিভিন্ন আন্দোলনে ১০ বার হামলার শিকার হন।
Posted ১০:৪২ পূর্বাহ্ণ | সোমবার, ২১ সেপ্টেম্বর ২০২০
dailymatrivumi.com | Mohammad Salahuddin