বর্তমান বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে তরুণ-তরুণীদের মধ্যে মাদক গ্রহণের প্রবণতা বেশ ব্যাপক হারে বেড়ে গিয়েছে। মাদকাসক্ত হয়ে পড়লেও পরবর্তীতে কেউ কেউ মাদক ছাড়তে চায়। আর চাইলে যে সবকিছু সম্ভব, তা করে দেখালেন এক বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী। মুন্নার (ছদ্মনাম) গল্পটা হতে পারে আশপাশের অনেক মাদকাসক্তের সুস্থ জীবনে ফেরার প্রেরণা।
মধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তান, এক সময়ের তুখোড় ছাত্র মুন্না (২৬)। বিশ্ববিদ্যালয়ে এসে জড়িয়ে পড়েন শহুরে মেধাবী বন্ধুদের মরণ আড্ডা ইয়াবার পাল্লায়। প্রথমে আরো কিছু শিক্ষার্থীর সাথে একত্রিত হয়ে নেশা করতেন। তারপর একসময় বন্ধুদের বাদ দিয়ে নিজেই হয়ে ওঠেন একক ভোক্তা। একসময় নেশার অর্থ নিশ্চিত করতে কৌশলে যুক্ত করে নেন বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া খালাতো ভাইকে।
প্রথম কয়েক মাস তাদের দুজনের এই নেশার রাজ্য বেশ আয়েশে চললেও এরপরই ঘটে ছন্দপতন। শুরুতে সেমিস্টার লস, এরপর নেশায় আচ্ছন্ন হয়ে বানিয়ে বানিয়ে কথা বলতে গিয়ে বন্ধুদের থেকে বিচ্ছিন্ন হওয়া, দেড় বছরের মাথায় বিভাগ থেকে বিদায়। আশপাশের সবাই বুঝতে পারলেন পথ হারিয়েছেন মুন্না। ঘৃণার পাত্র হয়ে পড়লেন পরিবারের কাছে। একটা সময় নিঃসঙ্গতা আঁকড়ে ধরে মুন্নার জীবন।
মুন্না বলেন, মাদক জগতে ঢোকার শুরুর সমটায় জীবন উপভোগের ছিল। তারপর বিরক্ত লাগতো। কিন্তু অভ্যাসের মধ্যে এবং শরীরের চাহিদা জড়িত থাকায় বের হওয়ার পথ ছিল না। রোজ খাওয়া শেষে ভাবতাম, আর না, আজই শেষ। কিন্তু পরিবেশ পরিস্থিতি আবারও পরের দিন ওইপথেই নিয়ে গেছে।
তিনি বলেন, তবে বাংলাদেশে করোনা ভাইরাস আমার কাছে এক আশীর্বাদ হয়ে আসে। করোনার কারণে সব কিছু লকডাউন দিলে একসময় সবাই ঘরবন্দি হয়ে পড়ি। সেই সাথে আস্তে আস্তে আমার নেশার জিনিসগুলোও হাতের নাগালের বাইরে চলে যেতে শুরু করে। প্রথম কয়েকদিন বেশ খারাপ অনুভব করেছি। এক সময় নিজের মধ্যে উপলব্ধি আসে। ক্ষণিকের আনন্দের জন্য আর মাদক গ্রহণ করবো না।
এরপর মরণনেশা থেকে জীবনকে ফিরিয়ে নিয়েছেন মুন্না। এখন জীবনের আনন্দটা মুন্না খুঁজে নিতে চান বই পড়া এবং সামাজিক কাজের মধ্য দিয়ে।
মাদকসেবীদের প্রতি মুন্নার বার্তা, মাদকের মধ্যে কোনো আনন্দ নেই, এটা শুধু জীবনকে ধ্বংস করে। নেশা থেকে ফিরে আসা কঠিন, জীবনও শেষ। অনেকেই বিভিন্ন অনুষ্ঠানে শখের বশে মাদক গ্রহণ করে থাকেন। কিন্তু এখান থেকেও শরীরে বাসা বাঁধতে পারে মাদকের নেশা। যেকোনো সমস্যা হলে পরিবারের সঙ্গে শেয়ার করুন। পরিবারের চেয়ে আপন কেউ নেই।
মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের তথ্যমতে, দেশে ৭৮ লাখ মাদকাসক্ত। যার অধিকাংশই তরুণ। মোট জনগোষ্ঠী ২০ কোটির অনুপাতে এ সংখ্যা কতটা ভয়াবহ তা সহজেই অনুমেয়।
Posted ৪:২৬ অপরাহ্ণ | সোমবার, ১৫ ফেব্রুয়ারি ২০২১
dailymatrivumi.com | Mohammad Salahuddin