যুদ্ধাপরাধে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হওয়া জামায়াত নেতা মীর কাসেম আলীর ২৫ মিলিয়ন মার্কিন ডলার যুক্তরাষ্ট্রে পাচারের অভিযোগে মনিলন্ডারিং আইনে মামলার যাবতীয় তথ্য এখতিয়ারভুক্ত তদন্ত সংস্থার কাছে হস্তান্তর করতে বিএফআইইউ’কে চিঠি দিয়েছে দুদক।
সোমবার (২৮ ডিসেম্বর) বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ)’কে দ্বিতীয় দফা চিঠি দিয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।
এর আগেও দুদকের পক্ষ থেকে কেন্দ্রিয় ব্যাংক এই গোয়েন্দা শাখা চিঠি দেওয়া হয়।
২০১৪ সাল থেকে বাংলাদেশের অ্যাটর্নি জেনারেলের মাধ্যমে মার্কিন সরকারের কাছে সমঝোতামূলক আইনি সহায়তার আবেদন মিউচ্যুয়াল লিগ্যাল অ্যাসিসট্যান্স রিকোয়েস্ট-এমএলএআর পাঠিয়েছে রাষ্ট্রীয় দুর্নীতি দমন সংস্থাটি।
অনুসন্ধান সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, ২০১২ সালের মাঝামাঝি সময়ে দুদকে অভিযোগ আসে, যুদ্ধাপরাধীদের বিচার বানচাল করতে জামায়াত নেতা মীর কাসেম আলী ক্যাসিডি অ্যান্ড অ্যাসোসিয়েটস নামে একটি মার্কিন লবিস্ট ফার্মকে ২৫ মিলিয়ন ডলার পাঠান। অভিযোগটি আসার পরই দুদক তখন অর্থপাচারের এ বিষয়টি আমলে নিয়ে অনুসন্ধান শুরু করে।
২০১২ সালের ২৫ আগস্ট আদালতের অনুমতিক্রমে মীর কাসেম আলীকে জেলগেটে জিজ্ঞাসাবাদও করা হয়।
অভিযোগ রয়েছে, মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার ঠেকাতে মীর কাসেম আলী ওয়াশিংটনের ‘ক্যাসিডি অ্যান্ড অ্যাসোসিয়েটস’ নামে একটি ‘ল’ ফার্ম’কে ২৫ মিলিয়ন ডলার (বাংলাদেশি মুদ্রায় যা প্রায় পৌনে তিনশ’ কোটি টাকা) পাঠিয়েছিলেন।
২০১২ সালের আগস্টের মাঝামাঝি আইন মন্ত্রণালয় থেকে লিখিতভাবে দুদক’কে বিষয়টি জানিয়ে অনুসন্ধান করতে বলা হয়। অভিযোগটি আমলে নিয়ে ওই বছরের আগস্টেই দুদক অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত নেয়।
দুদকে পাঠানো আইন মন্ত্রণালয়ের অভিযোগে বলা হয়েছে, মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার নস্যাৎ করতে ২০১০ সালের ৬ অক্টোবর ওয়াশিংটনের ‘ক্যাসিডি অ্যান্ড অ্যাসোসিয়েটস’র সঙ্গে মীর কাসেম আলী চুক্তি করেন। ওই চুক্তিতে যুদ্ধাপরাধীদের পক্ষে স্বাক্ষর করেন মীর কাসেম আলী আর ক্যাসিডি’র পক্ষে স্বাক্ষর করেন এ্যান্ড্রিও জে ক্যামিরস।
চুক্তিতে উল্লেখ রয়েছে, ক্যাসিডিকে অগ্রিম ২৫ মিলিয়ন ডলার দিলে তারা যুদ্ধাপরাধীদের পক্ষে কাজ শুরু করবেন। এ ছাড়া ক্যাসিডি ও সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের এ কাজে ভ্রমণের জন্য আরো দেড় লাখ ডলার অতিরিক্ত দিতে হবে। এ ছাড়া ভ্রমণের সব ধরনের পকেটমানি মীর কাসেম আলীকে বহন করতে হবে। চুক্তির পর মীর কাসেম আলীকে ক্যাসিডি একটি চিঠি লেখে। ওই চিঠিতে বলা হয়, ২০১০ সালের অক্টোবর থেকে তারা বাংলাদেশে আসা শুরু করবেন। একই সঙ্গে চুক্তি অনুযায়ী সিনেটর, কংগ্রেসম্যান, দক্ষিণ এশিয়া বিষয়ক প্রশাসকদেরও প্রভাবিত করা হবে। এরপরই মানবতাবিরোধী অপরাধ মামলার আসামি জামায়াতের নায়েবে আমির দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর পক্ষে ব্রিটিশ আইনজীবী টমি ক্যাডম্যান বাংলাদেশে আসেন। চুক্তি অনুযায়ী ২৫ মিলিয়ন ডলারের বিনিময়ে মাত্র ৬ মাস কাজ করার কথা মার্কিন এই ‘ল’ ফার্মটির। পরে কাজ করাতে হলে তাদের আরো মোটা অঙ্কের টাকা দিতে হবে।
এমন অভিযোগের ভিত্তিতে দুদক অনুসন্ধান করে মীর কাসেম আলীকে জিজ্ঞাসাবাদও করে। তবে জিজ্ঞাসাবাদে মীর কাসেম এসব অভিযোগ অস্বীকার করেন।
Posted ১:৩৬ অপরাহ্ণ | সোমবার, ২৮ ডিসেম্বর ২০২০
dailymatrivumi.com | Mohammad Salahuddin