লিয়াকত হোসেন লিংকন
মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতি চায় পুলিশ সদস্য মরহুম শেখ আব্দুল মান্নানের পরিবার। স্বাধীনতার ৪৯ বছরে ও মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতি মেলেনি ওই পুলিশ সদস্যের।
পুলিশ হেডকোয়াটার্স কর্তৃক প্রকাশিত ‘মুক্তিযুদ্ধে বাংলাদেশ পুলিশ’ শীর্ষক প্রামাণ্য গ্রন্থে শেখ আব্দুল মান্নানের মুক্তিযুদ্ধের অবদানের কথা বর্ণনা করা রয়েছে। আব্দুল মান্নানের পরিবারটি পুলিশ ও মুক্তিযোদ্ধা সুযোগ-সুবিধা থেকে বঞ্চিত হয়ে আসছে। অর্থাভাবে পরিবারের সদস্যরা নিদারুন কষ্টে দিন কাটাচ্ছেন।
শেখ আব্দুল মান্নান গোপালগঞ্জের কাশিয়ানী উপজেলার আড়ুয়াকান্দি গ্রামের মৃত নজির শেখের ছেলে।
পুলিশ হেডকোয়াটার্স কর্তৃক প্রকাশিত ‘মুক্তিযুদ্ধে বাংলাদেশ পুলিশ’ শীর্ষক প্রামাণ্য গ্রন্থ সূত্রে জানা গেছে, শেখ আব্দুল মান্নান অষ্টম শ্রেণি পাশ করে ১৯৬৪ সালে কনেষ্টবল পদে বরিশাল পুলিশ লাইনে যোগদান করেন। যার কনেষ্টবল নং-৭১১। একাত্তর সালের ২৫ মার্চ তিনি বরিশাল পুলিশ লাইনে কর্মরত ছিলেন। এপ্রিল মাসে ভারতের হাসনাবাদ যুব মুক্তিযোদ্ধা প্রশিক্ষণ শিবিরে তিনি যোগদান করেন। সেখানে তিনি প্রশিক্ষকের দায়িত্ব পালন করেন। স্বাধীনতার পর পুনরায় বরিশাল পুলিশ লাইনে যোগদান করেন। স্বাধীনতা বিরোধীরা আব্দুল মান্নানের গ্রামের বাড়ির ঘর-বাড়ি আগুন দিয়ে জ¦ালিয়ে দেয়। ওই থাকা আব্দুল মান্নানের ৩ বছর বয়সের শিশুপুত্র আগুনে দ্বগ্ধ হয়ে মারা যায়।
একাত্তরের যুদ্ধের সেই ভয়াবহতার কথা বর্ণনা করতে গিয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন মরহুম শেখ আব্দুল মান্নানের স্ত্রী মনোয়ারা বেগম। তিনি বলেন, আমার স্বামী মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেয়ায় রাজাকাররা আমাদের ঘর-বাড়ি আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দেয়। ওই আগুনে আমার তিন বছর বয়সী শিশুটিও পুড়ে মারা যায়। আমার স্বামী খবর পেয়ে ছুটি নিয়ে বাড়ি এসে শিশুর আগুনে পোড়া দেহ দেখে ভয়ে আঁৎকে উঠেন। এরপর থেকে তিনি মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলেন। এ কারণে পুনরায় আর চাকরিতে যোগদান করতে পারেনি। ২০০৩ সালে বার্ধক্যজনিত কারণে নিজ বাড়িতে মারা যান। এরপর তিন মেয়ে ও এক ছেলে নিয়ে অসহায় হয়ে পড়ি।
তিনি আরো বলেন, স্বাধীনতার এত বছর পার হলেও আজও আমার স্বামীর মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতি পায়নি। মুক্তিযোদ্ধা ভাতা ও পুলিশ পরিবার হিসেবে কোন রেশন ও অন্যান্য সুযোগ সুবিধা পাই না। আমার তিন মেয়ে, এক ছেলে। মেয়েদের বিয়ে দিয়েছি। স্বামীর মুক্তিযোদ্ধা সনদ না থাকায় ছেলেটির সরকারি চাকরি হয়নি।
শেখ আব্দুল মান্নানের ছেলে মাসুম শেখ বলেন, আমার বাবা মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিয়ে বীরত্বপূর্ণ অবদান রেখেছেন। আমরা পুলিশ মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে স্বীকৃতি চাই। গর্বিত পিতার সন্তান হিসেবে আমি আমার পিতার মুক্তিযোদ্ধার সনদ দাবি করছি।
কাশিয়ানী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রথীন্দ্র নাথ রায় বলেন, এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
Posted ২:৫০ অপরাহ্ণ | সোমবার, ১৭ আগস্ট ২০২০
dailymatrivumi.com | Mohammad Salahuddin