শরীয়তপুরে বন্যার সঙ্গে সঙ্গে ভাঙন শুরু হয়েছে পদ্মায়। গত এক সপ্তাহে জাজিরা ও নড়িয়া উপজেলায় পদ্মার ভাঙনের শিকার হয়েছে আড়াইশ’ পরিবার।
নড়িয়া পয়েন্টে পদ্মার পানি বিপৎসীমার ৩৫ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। ফলে শরীয়তপুরে দিন দিন ভয়াবহ আকার ধারণ করছে বন্যা পরিস্থিতি। প্রতিদিন নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হচ্ছে। তলিয়ে গেছে কাঁচা-পাকা অধিকাংশ গ্রামীণ সড়ক।
নড়িয়া-জাজিরা সড়ক তলিয়ে যাতায়াত বন্ধ হয়ে গেছে। শরীয়তপুর-ঢাকা সড়কের প্রায় ২০টি পয়েন্ট পানিতে তলিয়ে গেছে। যে কোনো মুহূর্তে এ সড়কে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যেতে পারে।
জেলার জাজিরা, নড়িয়া, ভেদরগঞ্জ ও সদর এ চার উপজেলায় পানিবন্দি হয়ে পড়েছে ৪০ হাজারেরও বেশি পরিবার। আর বন্যায় আক্রান্ত হয়েছেন প্রায় আড়াই লাখ মানুষ।
এছাড়া বন্যায় দেখা দিয়েছে গোখাদ্য ও বিশুদ্ধ খাবার পানির তীব্র সংকট। ভেঙে পড়েছে স্যানিটেশন ব্যবস্থা। সব মিলিয়ে মানবেতর জীবন যাপন করছেন বানভাসি মানুষ।
বন্যা দুর্গতদের সহায়তায় এ পর্যন্ত আড়াইশ’ মেট্রিক টন চাল ও ১৫শ’ প্যাকেট শুকনো খাবার বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। প্রশাসনের পক্ষ থেকে এগুলো বিতরণ করা হচ্ছে। গোখাদ্যের জন্য চাহিদাপত্র দিয়েছে জেলা প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর। এগুলো বরাদ্দের প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে বলে জানিয়েছে জেলা প্রশাসন।
জেলায় প্রায় একশ’টির মত আশ্রয় কেন্দ্র প্রস্তুত রাখা হয়েছে। জেলা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে আশ্রয়কেন্দ্রগুলোতে স্যানিটেশন ব্যবস্থা ও খাবার পানি বিশুদ্ধ করার ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে বলে প্রশাসনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে।
নাড়িয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, নড়িয়া পৌরসভাসহ উপজেলার ১৪টি ইউনিয়নের প্রত্যেকটিই বন্যায় আক্রান্ত হয়েছে। পানি ঢুকে পড়েছে প্রায় সব এলাকায়।
বৃহস্পতিবার (২৩ জুলাই) পর্যন্ত এ উপজেলায় পানিবন্দি হয়েছে ১৭ হাজার পরিবার। আক্রান্ত হয়েছেন প্রায় এক লাখ মানুষ। গত এক সপ্তাহে চরআত্রা ইউনিয়নের ৪০টি পরিবার নদী ভাঙনের শিকার হয়েছে।
নড়িয়ায় বন্যার্তদের সহায়তায় ৬০ মেট্রিক টন চাল ও ৫শ’ প্যাকেট শুকনো খাবার বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। এগুলো বিতরণ চলমান রয়েছে। গোখাদ্যের জন্য বরাদ্দ প্রক্রিয়া চলছে। ৪০টির মত আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত রাখা হয়েছে এ উপজেলায়। তবে আশ্রয়কেন্দ্রে এখনও কেউ আসেননি।
জাজিরা ইউএনও কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, জাজিরার বন্যা কবলিত পৌরসভা ও ১৩টি ইউনিয়নে বৃহস্পতিবার পর্যন্ত সাড়ে ১৮ হাজার পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। এতে দুর্ভোগে পড়েছেন এসব পরিবারের ১ লাখ ২০ হাজার মানুষ।
বড়কান্দি, পূর্ব নাওডোবা ও কুন্ডেরচর ইউনিয়নে দুইশ’ পরিবার পদ্মার ভাঙনের শিকার হয়েছে। বন্যা দুর্গতদের জন্য ১১০ মেট্রিক টন চাল ও ৫শ’ প্যাকেট শুকনো খাবার বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। যা বিতরণ অব্যাহত রয়েছে। গোখাদ্যের জন্য বরাদ্দ প্রক্রিয়া চলছে। ৩৫টি আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত রাখা হয়েছে এ উপজেলায়। আশ্রয়কেন্দ্রে স্যানিটেশন ব্যবস্থা ও খাবার পানি বিশুদ্ধ করবে জেলা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর। তবে আশ্রকেন্দ্রে এখনও কেউ আসেননি।
ভেদরগঞ্জ ইউএনও তানভীর আল নাসিফ জানান, ভেদরগঞ্জ উপজেলার উত্তর তারাবুনিয়া, কাচিকাটা ও চরভাগা ইউনিয়নে তিন হাজার পরিবার বন্যায় পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। আক্রান্ত হয়েছে ১৫ হাজার মানুষ। চরভাগা ইউনিয়নে ভাঙনের মুখে সাতটি পরিবার তাদের বসতঘর সরিয়ে নিয়েছে।
সদরের ইউএনও মাহাবুর রহমান শেখ জানান, বন্যায় সদর উপজেলায় প্রায় তিন হাজার পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। বন্যা দুর্গতদের জন্য ৭০ মেট্রিক টন চাল ও ৫শ’ প্যাকেট শুকনো খাবার বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। যা এরই মধ্যে বিতরণ শুরু হয়েছে।
জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী এস. এম আহসান হাবীব জানান, বৃহস্পতিবার নড়িয়া পয়েন্টে পদ্মা নদীর পানি বিপৎসীমার ৩৫ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে। এতে বন্যা পরিস্থিতি দিন দিন ভয়াবহ আকার ধারণ করছে।
শরীয়তপুর জেলা প্রশাসক কাজী আবু তাহের বলেন, প্রশাসনের পক্ষ থেকে বন্যা পরিস্থিতি সার্বক্ষণিক পর্যবেক্ষণ ও ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা করা হচ্ছে। বন্যা দুর্গতদের জন্য এ পর্যন্ত আড়াইশ’ মেট্রিক টন চাল ও দেড় হাজার শুকনো খাবার বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। এগুলো দুর্গতদের মধ্যে বিতরণ করা হচ্ছে।
Posted ২:২৩ পূর্বাহ্ণ | শুক্রবার, ২৪ জুলাই ২০২০
dailymatrivumi.com | Mohammad Salahuddin