একজনের বয়স ছয় দিন, অন্যজন পৃথিবীর আলো দেখেছে ১৩ দিন হলো। চমকে ওঠার মতো খবর হলো, ভারতের কোলাঘাট নার্সিংহোমে চিকিৎসাধীন এই দুই সদ্যোজাত শিশুর শরীরে মিলেছে করোনার অ্যান্টিবডি। অর্থাৎ, অনেকদিন আগেই তাদের শরীরে কোভিড-১৯ প্রবেশ করেছিল, যার প্রভাবে রক্তে অ্যান্টিবডিও তৈরি হয়ে গেছে।
চিকিৎসকদের বরাত দিয়ে ভারতীয় সংবাদমাধ্যম সংবাদ প্রতিদিন জানিয়েছে, ‘শিশু দু’টি মায়ের পেটে থাকতেই কোভিডে আক্রান্ত হয়ে পড়ে, যা ভারতে নজিরবিহীন।’
দুই শিশুর একজনের বাড়ি পূর্ব মেদিনীপুরের ভগবানপুরে, অন্যজন হলদিয়ার। ১৩ দিন বয়সি বাচ্চাটি ভগবানপুর থেকে গত শনিবার আসে কোলাঘাটের নার্সিংহোমে।
ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, ছয় দিন বয়সী বাচ্চাটির হঠাৎ হার্ট অ্যাটাক হয়েছিল। নার্সিংহোমে যখন আনা হয়, তখন তার হার্টবিট মাত্র ২০। সাথে সাথে ভেন্টিলেশনে ঢোকানো হয়। এক্সরে ও ইকোকার্ডিওগ্রাফিতে ধরা পড়ে, হার্টের একটি প্রকোষ্ঠ (লেফ্ট ভেন্ট্রিকল) কাজ করছে না। এতে সন্দেহ হয় চিকিৎসকদের।
শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ ডা. প্রবীর ভৌমিকের কথায়, করোনা থেকে বয়স্কদের হার্ট অ্যাটাক হচ্ছে। শিশুদের ক্ষেত্রে তেমনটা শোনা যায়নি। সন্দেহ হওয়ায় বাচ্চাটির অ্যান্টিবডি টেস্ট করাই। এতে আশঙ্কাই সত্যি হয়!
তিনি আরো বলেন, ছয় দিনের বাচ্চাটি ‘প্রিম্যাচিওর’। নির্দিষ্ট সময়ের আড়াই মাস আগেই ভূমিষ্ঠ হয়েছে। ওজন স্বাভাবিকের তুলনায় অনেকটাই কম। মাত্র ১ কেজি ১শ গ্রাম। জন্ম থেকেই তার শ্বাসকষ্ট। বাঁ দিকের অংশে চেপে বসেছে নিউমোনিয়া। অ্যান্টিবায়োটিক দিয়েও কাজ হচ্ছে না। শত চেষ্টাতেও কমানো যাচ্ছে না নিউমোনিয়া। এক্ষেত্রেও অ্যান্টিবডি টেস্ট করিয়ে দেখা যায় আইজিজি পজেটিভ।
চিকিৎসক বলেন, ‘দুই সদ্যোজাত শিশুর শরীরে এই আইজিজি পাওয়া গেছে। কিন্তু তার পরিমাণ সামান্য বলে তা করোনার বিরুদ্ধে লড়তে পারেনি। আপাতত দুই শিশুই মৃত্যুর সঙ্গে লড়ছে। দুই পরিবারকেই বলেছি, আমরা আপ্রাণ চেষ্টা করছি। কিন্তু বাঁচার আশা অত্যন্ত কম।’
এদিকে, তাদের মায়েরা করোনা আক্রান্ত হলে তার প্ল্যাসেন্টার তরল থেকে করোনা সংক্রমণ ছড়াতে পারে কি না- তা নিয়ে জোর বিতর্ক রয়েছে। মায়ের করোনা ছিল কি না নিশ্চিত হতে মঙ্গলবার দুই মায়েরও অ্যান্টিবডি টেস্ট করা হয়েছে।
তবে শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ ডা. নিশান্তদেব ঘটক জানিয়েছেন, আইজিজি পজেটিভ মানেই যে শিশু দু’টি গর্ভাবস্থায় কোভিড পজেটিভ হয়েছে এমনটা নিশ্চিত হয়ে বলা যায় না। যদি ভূমিষ্ঠ হওয়ার ২৪ ঘণ্টার মধ্যে দুই শিশুর লালারস নেওয়া হত এবং সেই রিপোর্ট পজেটিভ আসত তবেই বলা যেত এটা ভার্টিকাল ট্রান্সমিশন।
সূত্র: সংবাদ প্রতিদিন
Posted ৭:২৭ পূর্বাহ্ণ | বুধবার, ৩০ ডিসেম্বর ২০২০
dailymatrivumi.com | Mohammad Salahuddin