কাশিয়ানী (গোপালগঞ্জ) প্রতিনিধি
মুক্তিযোদ্ধা আবুল কালাম (৬৬)। ঈদের দিন সকালে হঠাৎ তাঁর বুকে ব্যথা। শ্বাস নিতে প্রচন্ড কষ্ট হচ্ছিল। ঈদের দিন হাসপাতালে কোন চিকিৎসক পাওয়া যাবে না। এমন চিন্তায় সময় পার করছিল মুক্তিযোদ্ধার পরিবারের লোকেরা । এক পর্যায় কাশিয়ানী স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা: মুহাম্মাদ ইকবাল খানের সাথে মুঠোফোনে কথা বলে তাঁর পরামর্শে মুক্তিযোদ্ধাকে তাঁর পরিবারের সদস্যরা কাশিয়ানী উপজেলা সদর হাসপাতালে নিয়ে গেলেন। মুক্তিযোদ্ধার শারিরীক অবস্থা দেখে চিকিৎসাপত্র লিখে দিলেন ওই চিকিৎসক ।
এ সময় জরুরী বিভাগে আরো কিছু রোগীকে সেবা দিতে দেখা গেল চিকিৎসক-নার্সদের।
এভাবে ঈদের আনন্দ ও প্রিয়জনদের কথা ভুলে রোগীদের চিকিৎসা সেবা দিয়েছেন কাশিয়ানী হাসপাতালের চিকিৎসক, নার্স ও আয়ারা। সবাই যখন পরিজনদের সঙ্গে ঈদ আনন্দ ভাগাভাগি করছে; চিকিৎসকরা তখন রোগীদের সেবায় নিয়োজিত। তবুও তাদের আক্ষেপ নেই। কারণ মানুষের সেবার মাঝেই তারা খুঁজে পান ঈদের আনন্দ।
সরেজমিনে হাসপাতালে গিয়ে দেখা গেছে, সারাদেশ যেখানে ঈদ উদযাপনে ব্যস্ত, সেখানে হাসপাতালের ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে ঘুরে রোগীদের চিকিৎসাপত্র দেখে ওষুধ লিখে দিচ্ছেন কর্তব্যরত চিকিৎসক-নার্সরা। ঈদের আনন্দ থেকে বঞ্চিত হলেও এ সেবার মাঝে তারা আনন্দ পাচ্ছেন বলে জানিয়েছেন।
কাশিয়ানী হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, এ পর্যন্ত ১৫৯০ জনের নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে। এরমধ্যে করোনা শনাক্ত হয়েছে ২৭৩ জনের। সুস্থ হয়েছেন ২২৩ জন, মারা গেছেন ৬ জন। হাসপাতালের আইসোলেশনে চিকিৎসাধীন রয়েছেন ৪৪ জন। ঈদের ছুটিতেও এসব রোগীদের সেবা দিতে চিকিৎসক ও নার্সরা সার্বক্ষনিক দায়িত্ব পালন করছেন।
কাশিয়ানী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা: মুহাম্মাদ ইকবাল খান বলেন, ঈদের দিন প্রিয়জনদের কথা ভুলে, নিজের আনন্দকে বিসর্জন দিয়ে কর্মস্থলে থেকে রোগীদের সেবা দিয়ে যাচ্ছি। রোগীদের সুস্থতার মাঝে খুঁজে পাবো ঈদের আনন্দ। রোগীদের সুস্থ করে পরিবারের কাছে ফিরিয়ে দেয়াটাই সবচেয়ে বড় আনন্দের। এই পৃথিবীটা যেন সুস্থ ও সুন্দর হয়ে ফিরে আসে এটাই আমরা প্রত্যাশা করি।
কাশিয়ানী উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা: মোঃ কাইয়ূম তালুকদার জানান, করোনা পরিস্থিতিতে ঈদের দিনও চিকিৎসক, নার্স ও স্টাফরা দায়িত্ব পালন করেছেন। পরিবারের সাথে সময় দিতে পারিনি, যদিও এটা কষ্টদায়ক। তবে দুর্যোগকালে মানুষের কথা ভাবতে হবে। এ দায়িত্ববোধ থেকে চিকিৎসক, নার্স ও আয়ারা ক্লান্তিহীনভাবে সেবা দিয়ে যাচ্ছেন।
Posted ৩:১৩ পূর্বাহ্ণ | সোমবার, ০৩ আগস্ট ২০২০
dailymatrivumi.com | Mohammad Salahuddin