নরসিংদীর পলাশ উপজেলার এক বীরাঙ্গনার নাম বেদনা দত্ত। ১৯৭১ সালে মুক্তিযোদ্ধাদের রান্না করে খাওয়ানোসহ নানাভাবে সহায়তার কারণে পাকিস্তানীদের নির্মমতার শিকার হওয়ার ৫০টি বছর স্বীকৃতি থেকে বঞ্চিত ছিলেন।
তাকে খোঁজে বের করে বিভিন্ন গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশের পর বীরাঙ্গনার স্বীকৃতি মিলেছে। পাশাপাশি সম্মানী ভাতাও চালু হয়েছে। এখন তার জন্য তৈরি হচ্ছে বীর নিবাস। সেই বীর নিবাসের ইটের গাঁথুনি শেষে ঠিকাদার কাজ বন্ধ করে চলে যায়।
বেদনা দত্তের পরিবারের পক্ষ থেকে বন্ধের বিষয়ে জানতে চাইলে তাদের জানিয়ে দেয়া হয় এই ঘরের কাজ বাতিল হয়ে গেছে। সেই থেকে বেদনা দত্তের দুশ্চিন্তায় নাওয়া খাওয়া ছেড়ে হতাশাগ্রস্ত হয়ে পড়েন। এ সময় তার পরিবারের পক্ষ থেকে অভিযোগ করা হয় ঘরে সিমেন্টের পরিমাণ যথাযথভাবে ব্যবহার করা হয়নি। এছাড়া দরজা ও জানালায় ব্যবহৃত উপকরণ খুবই নিম্নমানের ব্যবহার করা হয়েছে।
জানা যায়, মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য দ্বিতীয় পর্যায়ের বীর নিবাসের আওতায় নরসিংদীর পলাশে ৪৮টি বীর নিবাসের বরাদ্ধ দেয়া হয়। এরমধ্যে ৫ নম্বর লটে ৪টি বাড়িসহ ২০টি বাড়ি নির্মাণের কাজ পায় মেসার্স এস কে এন ট্রেডার্সের সাখাওয়াত হোসেন কচি নামে এক ঠিকাদার।
তিনি জানান, ২০টি ঘরের কাজ পেয়েছি। এরমধ্যে ৯টি ঘরের কাজ শুরু করে অর্ধেক করার পর বিল দাবি করলে আমাকে ৮টি ঘরের বিল দেয়া হয়। আর বাকি একটি বেদনা দত্তের ঘরের বিল না দিয়ে তা বাতিল বলে জানালে এর কাজ বন্ধ করে দেয়া হয়।
নিম্নমানের উপকরণের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, প্রথম পর্যায়ে নির্মাণকৃত ঘরের আদলেই উপকরণ ব্যবহার করা হচ্ছে। এই ঘরের জন্য আলাদা কোনো উপকরণ ব্যবহার করা হচ্ছেনা।
উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মোহাম্মদ শহিদুল ইসলাম জানান, বেদনা দত্তের ঘরের কাজটি অর্ধেক করার পর মৌখিক নির্দেশনায় বন্ধ ছিলো। পরে সেটি ইউএনও মো. রবিউল আলম প্রকল্প পরিচালকের সঙ্গে যোগাযোগ করে ঘরের কাজটি পুনরায় চালু করেন। ঠিকাদরকে যা ধরা হয়েছে তা দিয়েই করে যাচ্ছেন। নিম্নমানের উপকরণ দেয়ার কথা নয়।
বেদনা দত্তের ঘরটি কেনো বন্ধ করা হয়েছিল তা জানতে চাইলে পলাশ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. রবিউল আলম জানান, মৌখিকভাবে জানতে পেরেছি বীরাঙ্গনা বেদনা দত্তের ঘরের নির্মাণ কাজ বন্ধ করে দেয়া হয়। লিখিত কোনো পত্র পাওয়া যায়নি। পরবর্তীতে প্রকল্প পরিচালকের সঙ্গে যোগোযোগ করে এই ঘরের নির্মাণ কাজ পুনরায় চালু করা হয়েছে।
ঘরে নির্মাণ কাজে নিম্নমানের উপকরণ ব্যবহারের অভিযোগের বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বলেন, বিষয়টি আমার জানা নেই। এছাড়া যারা অভিযোগ করছেন তারা তো এ বিষয়ে পারদর্শী নয়। তারা তো বলতে পারেন না। আমি সরেজমিন গিয়ে দেখে জানাবো।
বেদনা দত্তের পরিবারের দাবি বীর নিবাসটি মান সম্পন্ন উপকরণ দিয়ে দ্রুত নির্মাণকাজ শেষ করার জন্য। যাতে জীবনের বাকিটা সময় এই ঘরে কাটাতে পারেন।
Posted ৩:৫৫ পূর্বাহ্ণ | রবিবার, ২৬ মার্চ ২০২৩
dailymatrivumi.com | Mohammad Salahuddin