মহামারি করোনার কারণে থমকে আছে বাংলাদেশ রোড ট্রান্সপোর্ট কর্তৃপক্ষের (বিআরটিএ) স্বাভাবিক কার্যক্রম। গাড়ির ফিটনেস পরীক্ষা থেকে শুরু করে সকল কার্যক্রমে দেখা দিয়েছে অচলাবস্থা। পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েও ড্রাইভিং লাইসেন্স পাচ্ছেন না প্রায় ১২ লাখ চালক। এতে চরম ভোগান্তির মধ্যে পড়েছেন তারা।
গত বছরেরমার্চ থেকে শুরু হয়েছে এ লাইসেন্স জট। এছাড়াও করোনার আগেও কিছু আবেদন জমা ছিল বিআরটিএতে। সব মিলিয়ে লাইসেন্স প্রদানে বড় ধরনের জটিলতার সৃষ্টি হয়েছে। অনেক গ্রাহক দিনের পর দিন ঘুরছেন মিরপুরের বিআরটিএ অফিসে।
কিন্তু তারা অফিসে এসে কর্মকর্তাদের মুখে আজ-কাল পেয়ে যাবেন এমন আশ্বাস শুনে হতাশ হচ্ছেন। অনেকেই বিদেশে গাড়ি চালানোর জন্য ড্রাইভিং লাইসেন্সের পরীক্ষা দিয়েছিলেন। কিন্তু স্মার্ট কার্ড না পাওয়ায় তারা আর বিদেশে যেতে পারছেন না।
এছাড়াও প্রায় ১০ লাখ গাড়ি চালক তাদের গাড়ি চালাচ্ছেন বিআরটিএর অ্যাকনলেজমেন্ট স্লিপ দিয়ে। এতে অনেক সময় তারা ট্রাফিক পুলিশের কাছে হেনস্তার শিকার হচ্ছেন। সড়কে ঘটছে পুলিশ ও চালকদের মধ্যে বাকবিতণ্ডা। কর্তৃপক্ষ বলছেন, ভারতের মাদ্রাজ সিকিউরিটি প্রিন্টার্সের কারণেই এই ভয়াবহ ভোগান্তি। এক বছরে স্মার্ট কার্ড লাইসেন্স ডেলিভারির জন্য তাদের সঙ্গে চুক্তি হলেও তারা তা সরবরাহ করতে পারছে না। কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, মাদ্রাজ সিকিউরিটি প্রিন্টার্স স্মার্ট কার্ড সরবরাহ করতে না পারে তাহলে বিকল্পভাবে স্মার্ট কার্ড সরবরাহ করা হবে।
এ বিষয়ে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআরটিএ) চেয়ারম্যান নূর মোহাম্মদ মজুমদার মানবজমিনকে জানান, ‘করোনার কারণে প্রায় ১২ লাখ গ্রাহকের আবেদন ঝুলে আছে। আমরা দ্রুত তাদের স্মার্ট কার্ড দেয়ার উদ্যোগ নিয়েছি। যে জট লেগেছে তা দ্রুত কেটে যাবে।’
বিষয়টি দৃষ্টি আকর্ষণ করলে ঢাকা মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার (ট্রাফিক) মোহাম্মদ মনিবুর রহমান জানান, ‘লাইসেন্স না পাওয়ার ব্যাপারে কোনো ভুক্তভোগী পুলিশের কাছে অভিযোগ করলে আমরা তা বিষয়টি খতিয়ে দেখবো। পাশাপাশি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে বিষয়টি অবহিত করবো।’
সরজমিনে গতকাল দেখা যায়, বিআরটিএ এর স্মার্ট কার্ড বিতরণে মানুষের জটলা। লোকজন সবাই ডেলিভারি স্লিপ নিয়ে এসেছে। সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা সবাইকে পরে স্মার্ট কার্ড দেয়া হবে বলে জানান। কেউ কেউ গাড়ির কাগজ এবং সঙ্গে গাড়ির চালানোর লাইন্সেনের জন্য আবেদন করেছেন। অনেক গ্রাহক দুইটিরই স্মার্ট কার্ড পাননি। সুমন নামে এক প্রাইভেট কার চালক জানান, গত বছরের ফেব্রুয়ারিতে তিনি প্রাইভেট কার চালানোর পরীক্ষা দিয়েছেন। কিন্তু এখন পর্যন্ত লাইসেন্স পাননি। তিনি প্রত্যেক মাসে বিআরটিতে আসেন। আবুল হোসেন নামে আরেক আবেদন প্রার্থী জানান, তিনি পাঠাও চালান। পরীক্ষা দেয়ার পরও তিনি স্মার্ট কার্ড পাননি। সড়কে পুলিশি ঝামেলায় পড়তে হয়।
জানা গেছে, মাদ্রাজ সিকিউরিটি প্রিন্টার্সের ব্যর্থতার কারণে ড্রাইভিং লাইসেন্স দিতে না পারায় বিআরটিএর সব অর্জন স্লান হয়ে যাচ্ছে। দেড় বছর আগে আবেদন ও পরীক্ষায় পাস করেও এখনো ড্রাইভিং লাইসেন্স না পাওয়া ব্যক্তিদের ভোগান্তির মধ্যে পড়েছেন। স্মার্ট ড্রাইভিং লাইসেন্স কার্ড না পাওয়ায় সরকারি-বেসরকারি চাকরিতে আবেদন করতে পারছেন না অনেকে। এর কারণে গত ২ বছর ধরে বাংলাদেশ দক্ষ চালক রপ্তানিতে ব্যর্থ হচ্ছে। ফলে অন্যান্য দেশ সে স্থান দখল করে নিচ্ছে।
সূত্র জানায়, প্রত্যেক মাসে দুই লাখ ড্রাইভিং লাইসেন্স কার্ড ডেলিভারি দিতে পারবে বলে মাদ্রাজ সিকিউরিটি প্রিন্টার্স বিআরটিএর কাছে আবেদন করেছিল। প্রতিষ্ঠানের আবেদনে সাড়া দিয়ে বিআরটিএ তাদের সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হয়। বিআরটিএ মনে করেছিল যে, দ্রুত ডেলিভারি দিলে কারও ভোগান্তিতে পড়তে হবে না। কিন্তু তারা চুক্তি পূর্ণ করতে ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছে। প্রতিষ্ঠানটি একাধিকবার চিঠি দিলেও তারা কোনো সন্তোষজনক জবাব দিতে পারেনি।
সূত্র জানায়, বহু অভিযোগে অভিযুক্ত ওই প্রতিষ্ঠানটি প্রায় ১০০ কোটি টাকার ড্রাইভিং লাইসেন্সের স্মার্ট কার্ড প্রকল্পের কাজ দিয়েছে বিআরটিএ কর্তৃপক্ষ। ওই প্রতিষ্ঠানকে কাজ দেয়ার ক্ষেত্রে বিআরটিএর এক কর্মকর্তার যোগসাজশ রয়েছে। ওই কর্মকর্তাকে বিআরটিএর প্রভাবশালী কর্মকর্তা বলে সবাই চেনেন। এ কারণে কেউ তার বিরুদ্ধে মুখ খুলতে রাজি হননি। দরপত্র বাতিল করে বাদ দেয়া হয় যোগ্য কোম্পানিকে। যোগ্য কোম্পানিকে বাদ দেয়ার ব্যাপারে তার হাত ছিল বলে জানা গেছে। স্মার্ট কার্ডের প্রকল্পে ফ্রান্সের সেল্্প নামে একটি প্রতিষ্ঠান সর্বনিম্ন দরদাতা হয়েও দরপত্রের সব শর্ত পূরণ করলেও তাদের কাজ দেয়া হয়নি বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
Posted ২:৩৭ পূর্বাহ্ণ | বৃহস্পতিবার, ১৫ জুলাই ২০২১
dailymatrivumi.com | Mohammad Salahuddin