টাঙ্গাইলের মাওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (মাভাবিপ্রবি) সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের ইংরেজি বিভাগ ও ব্যবসায় শিক্ষা অনুষদের হিসাববিজ্ঞান বিভাগ ও ব্যবস্থাপনা বিভাগে নেই কোন কর্মকর্তা ও কর্মচারী।
অথচ প্রতি শিক্ষাবর্ষেই চলছে শিক্ষার্থী ভর্তি। স্ব-স্ব বিভাগের শিক্ষরাই করছেন শিক্ষাদান, আবার তারাই করছেন কর্মকর্তা-কর্মচারীর দাফতরিক কাজকর্ম। এমনকি তাদের পরিচ্ছন্নতা কর্মীও নেই। বাংলায় একটা প্রবাদ প্রচলিত রয়েছে, “ঢাল নেই তলোয়ার নেই, নাম তার নিধিরাম সর্দার। ” এটা যেনো তারই প্রতিচ্ছবি।
বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা যায় যে, ব্যবস্থাপনা ও হিসাববিজ্ঞান বিভাগ ২০১৮ সাল থেকে শুরু হলেও সেখানে কোন কর্মকর্তা কর্মচারী নিয়োগ দেওয়া হয়নি। অপরদিকে ইংরেজি বিভাগ ২০১৯ সালের ২২ অক্টোবর থেকে কার্যক্রম শুরু করলেও তাদের বিভাগে কোন কর্মকর্তা বা কর্মচারী নেই। বর্তমানে ইংরেজি বিভাগে এমএ কোর্সে ৭৯ জন শিক্ষার্থী অধ্যয়নরত রয়েছে ।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায় যে, ব্যবসায় প্রশাসন বিভাগেই রয়েছে প্রকট কর্মকর্তা-কর্মচারী সংকট। নিজ বিভাগের কার্যক্রম চালাতেই হিমশিম হচ্ছেন তারা। এই বিভাগে উপ-রেজিস্ট্রার আছে ১ জন, পূর্বে উচ্চমান সহকারী ২ জন থাকলেও সম্প্রতি ১ জন বদলি হয়েছেন। ফলে বর্তমানে উচ্চমান সহকারী রয়েছেন ১ জন, সেমিনার গ্রন্থাগারিক ১ জন, এমএলএসএস ১ জন, ল্যাব সহকারী ১ জন কর্মরত আছেন। অর্থাৎ ব্যবসায় প্রশাসন বিভাগে কর্মরত আছেন মাত্র ৫ জন। যেখানে কর্মকর্তা, কর্মচারী মিলে ৭ জনের প্রয়োজন।
অপরদিকে ব্যবসায় প্রশাসন বিভাগ মূলত শিক্ষার্থীদের চাকরির সুবিধার কথা বিবেচনা করে ব্যবসায় প্রশাসন বিভাগ ভেঙ্গে ব্যবস্থাপনা ও হিসাববিজ্ঞান বিভাগ করা হয় ২০১৮ সালে। ব্যবসায় প্রশাসন বিভাগে বর্তমানে ২০০ জন শিক্ষার্থী অধ্যয়নরত রয়েছে। অপরদিকে হিসাববিজ্ঞান বিভাগ ও ব্যবস্থাপনা বিভাগে শিক্ষা কার্যক্রম ও শিক্ষার্থী ভর্তি শুরু করলেও তাদের বিভাগে কোনো কর্মকর্তা ও কর্মচারী এই পর্যন্ত নিয়োগ দেওয়া হয়নি।
অপরদিকে ইংরেজি বিভাগ, ব্যবস্থাপনা বিভাগ, হিসাববিজ্ঞান বিভাগ ও ব্যবসায় প্রশাসন বিভাগসহ কয়েকটি বিভাগে স্থায়ী পরিচ্ছন্নতাকর্মীও নেই।
ব্যবসায় প্রশাসন বিভাগের চেয়ারম্যান ড. রোস্তম আলী বলেন, করোনা পরিস্থিতির কারণে ব্যবসায় প্রশাসন বিভাগের কার্যক্রম অনলাইনে চলমান রাখায় জনবল কম প্রয়োজন হয়েছে। কিন্তু বর্তমানে কোভিড পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়ায় শিক্ষাকার্যক্রম সশরীরে চলমান রাখায় উক্ত সংকটের সৃষ্টি হয়েছে। আমাদের কাজের প্রসারও অনেক বেড়ে গিয়েছে। এমনকি আমার ব্যবসায় প্রশাসন বিভাগের কার্যক্রম পরিচালনা করতে একাডেমিক কার্যক্রম ছাড়াও দাফতরিক কাজ ও আমাদের করতে হচ্ছে। উপরন্তু হিসাববিজ্ঞান ও ব্যবস্থাপনা বিভাগ ও এই ৫ জন কর্মকর্তা-কর্মচারীর উপর নির্ভর করছে। কারণ তাদের কোনো কর্মকর্তা- কর্মচারী নিয়োগ দেওয়া হয়নি। এতো প্রতিকূল পরিস্থিতিতেও আমরা কখনো আমাদের কাজ থামিয়ে রাখিনি। আমরা চাইনা কখনো আমাদের কার্যক্রম স্থবির হোক। আমাদের ব্যবসায় শিক্ষা অনুষদের শিক্ষকেরাও অত্যন্ত আন্তরিক। তাই অবশ্যই পর্যাপ্ত জনবলের ব্যবস্থা করে আমাদের জনবলের সংকট দূর করার জন্য প্রশাসনের দৃষ্টি আকর্ষন করতে চাই।
ব্যবসায় শিক্ষা অনুষদের ডিন ও হিসাববিজ্ঞান বিভাগের চেয়ারম্যান ড. সৈয়দ মওদুদ-উল-হক বলেন, প্রশাসনকে আমাদের জনবল সংকটের কথা জানিয়েছি এবং আমার হিসাববিজ্ঞান বিভাগের জন্য ১০ জন কর্মকর্তা ও কর্মচারীর চাহিদা পত্রও দিয়েছি। ২০১৮ তে বিভাগের কার্যক্রম শুরু হলেও কর্মকর্তা নিয়োগ না দেওয়ায় আমাদের উপর দাফতরিক কাজের প্রেশার পড়ে গিয়েছে। নতুন ২০২০ -২০২১ শিক্ষাবর্ষে শিক্ষার্থীদের ভর্তি কার্যক্রম শুরু হচ্ছে। পর্যাপ্ত জনবল ছাড়া কিভাবে বিভাগের দাফতরিক কাজ চলবে তা নিয়ে আমরা সন্দিহান।
ব্যবস্থাপনা বিভাগের চেয়ারম্যান শাহেদ মাহমুদ বলেন, ব্যবস্থাপনা বিভাগ ২০১৮ তে কার্যক্রম শুরু করলেও বর্তমানে আমার বিভাগে কোন কর্মকর্তা-কর্মচারী নেই। এমনকি পরিচ্ছন্নতা কর্মীও নেই। পাঠদানের পাশাপাশি দাফতরিক কাজ আমাদের বিভাগে রাত ৯-১০টা পর্যন্ত করতে হয়। প্রশাসনকে আমাদের জনবলের চাহিদাপত্র পাঠিয়েছি তারা জানিয়েছে চাহিদাপত্র ইউজিসিতে পাঠানো হয়েছে। কিন্তু কবে আমাদের বিভাগে দাফতরিক কর্মকর্তা-কর্মচারী পাবো সে ব্যাপারে কিছুই জানি না।
ইংরেজি বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. মো. আনিসুর রহমান আনিছ জানান, আমার ইংরেজি বিভাগে কর্মকর্তা কর্মচারী ১ জনও নাই। আমি আমার বিভাগের জন্য ৯ জন কর্মকর্তা কর্মচারীর চাহিদার লিস্ট দিয়েছিলাম। ইউজিসি থেকে আমাকে চিটির মাধ্যমে জানানো হয়েছে, আপাতত লোকবল নিয়োগের কোন সুযোগ নেই। যত তাড়াতাড়ি আমার বিভাগে কর্মকর্তা- কর্মচারী দিবে, ততই ভালো হবে। কারণ আমাদের একাই সব দাফতরিক কাজ করা লাগে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার ড. মো. তৌহিদুল ইসলাম বিদ্যমান জনবল সংকটের ব্যাপারে জানান, আমি এটা ভিসিকে জানিয়েছি। ইউজিসিতে চিঠি দিয়েছি।
Posted ৮:১০ পূর্বাহ্ণ | বুধবার, ১২ জানুয়ারি ২০২২
dailymatrivumi.com | Mohammad Salahuddin