কাপ্তাই জাতীয় উদ্যানের বড়ছড়ার সর্পিল ঝিরি ধরে হাঁটছি। সঙ্গে রয়েছে সহকর্মী ড. তৈমুর ইসলাম ও শেষ বর্ষ প্রাণিচিকিৎসার চারজন ছাত্র। মার্চের প্রচণ্ড গরমে প্রাণ ওষ্ঠাগত। কিন্তু পায়ে স্যান্ডেল থাকায় ঝিরির ঠান্ডা পানির স্পর্শে সমস্ত দেহ-মন যেন জুড়িয়ে গেল! কাজেই পায়ে চলা পথ না মাড়িয়ে ঝিরির পানিপথেই হাঁটতে লাগলাম। অনেকটা পথ হাঁটা হয়ে গেল, কিন্তু কোনো পাখির তো দেখা পেলাম না? প্রচণ্ড গরমে পাখিরা বোধ হয় গাছের ছায়ায় আশ্রয় নিয়েছে, তাই চোখে পড়ছে না। কী আর করা, অনেকটা বাধ্য হয়েই বুনো ফুল-ফল-প্রজাপতি-ফড়িংয়ের ছবি তুলতে লাগলাম। একসময় তৈমুরসহ ছাত্রদের বললাম আমার থেকে বেশ একটু দূরত্ব বজায় রেখে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে নিঃশব্দে হাঁটতে। পাখিদের স্বাভাবিক কাজকর্মে ব্যাঘাত না ঘটালে ওরা বিরক্ত কম হবে। এতে পাখি পর্যবেক্ষণ ও ছবি তুলতে সুবিধা হবে।
যা হোক, ছড়ার বেশ ক’টি বাঁক পেরিয়ে একসময় প্রায় এক কিলোমিটার দূরে চলে এলাম। ওখানে একটি নীলকান মাছরাঙাকে (Blue-eared Kingfisher) ঝোপের ওপর বসে স্থির দৃষ্টিতে ঝিরির পানির দিকে তাকিয়ে থাকতে দেখলাম। খানিকক্ষণ পরেই ও ঝিরি থেকে ছোট্ট একটি মাছ মুখে নিয়ে দ্রুত অন্যদিকে চলে গেল। আর আমিও সুযোগমতো বিভিন্ন অ্যাঙ্গেলে ওর কিছু ছবি তুলে নিলাম। এরপর আবারও ঝিরি ধরে হাঁটা। এ মুহূর্তে তৈমুর ও ছাত্রদের থেকে বেশ দূরে একাকী রয়েছি। পুরো ঝিরিতে সুনসান নীরবতা। এমন সময় নীরবতায় ছেদ ঘটাল একটি পোকামারা (Common Kestrel)। ঝিরির পাশে হেঁটে বেড়াচ্ছিল একটি ধূসর খঞ্জন (Grey Wagtail)। পাশের এক ঝোপে দেখা গেল বেশ ক’টি কালোমাথা বুলবুলি (Black-headed Bulbul)। আর ঝিরির পানিতে গোসল করছিল ক’টি কালোঝুঁটি বুলবুলি (ইষধপশ-পৎবংঃবফ ইঁষনঁষ)। ওদের সবার ছবি তুলে সামনের দিকে এগোতেই ঝিরির পাশে গাছের ডালে মাথায় রাজকীয় ঝুঁটিওয়ালা এক শিকারি পাখিকে বসে থাকতে দেখে মনটা খুশিতে নেচে উঠল। দ্রুত ওর ক’টি ছবি তুলে সামনের দিকে এগিয়ে গেলাম। একটি বড় গাছের মগডালে বসে থাকা পাকড়া ধনেশের (ওহফরধহ চরবফ ঐড়ৎহনরষষ) ছবি তুলে শিকারি পাখিটি যেখানে বসে ছিল, সেখানে ফিরে এলাম। কিন্তু গাছের ডালে ওকে পেলাম না। তবে আকাশপানে তাকাতেই ওকে চমৎকার ভঙ্গিমায় উড়ে বেড়াতে দেখলাম। আর সঙ্গে সঙ্গে ওর কিছু উড়ন্ত ছবি তুলে ফিরতি পথ ধরলাম।
Posted ৯:৪২ পূর্বাহ্ণ | মঙ্গলবার, ২৩ নভেম্বর ২০২১
dailymatrivumi.com | Mohammad Salahuddin