দেশে উল্লেখযোগ্য হারে বেড়ে চলেছে হৃদরোগী। বহুমাত্রিক সমস্যায় উচ্চহারে বাড়ছে এ রোগ। বাংলাদেশ তো রয়েছেই, এমনকি ভারতের হাসপাতালগুলোতে দেখা যায় সে দেশের তুলনায় বাংলাদেশি রোগী অনেক বেশি। ছোট শিশু থেকে বৃদ্ধ যেন কারও রেহাই নেই। কারও হার্টে ব্লক, কারও ভাল্ভ নষ্ট, আবার কারও পেসমেকার লাগে। বেশিরভাগ শিশুর হার্টে ছিদ্র। সাধারণ ও সাদামাটা জীবনযাপনের পর এমনকি ধূমপান বা কোনো নেশা জাতীয় কিছু সেবন না করেও অনেকে হৃদরোগে আক্রান্ত হচ্ছেন। ভাজাপোড়া বা চর্বি জাতীয় খাবার না খাওয়া কিংবা অনেক পরিশ্রম করেও হৃদরোগে আক্রান্তের ঘটনা ঘটছে। এনজিওগ্রাম করার পর হার্টের ব্লক জানা যায়। প্রশ্ন হলো, হৃদরোগ হওয়ার যেসব কারণ রয়েছে তার কোনোটা দৃশ্যতা না থাকার পরও কেন হৃদরোগ হচ্ছে?
আসলে আমাদের দেশে হৃদরোগ বেড়ে যাওয়ার মূল কারণ খাবারে ভেজাল। আমরা বর্তমানে যেসব খাবার খাই তার সবই ভেজাল ও বিষে ভরা। উৎপাদন থেকে শুরু করে বাজারে বিক্রি হওয়া পর্যন্ত চলে ভেজাল কারবার। বর্তমানে বাংলাদেশের নিরাপদ খাদ্য পাওয়া খুবই কঠিন। আমরা যেসব প্যাকেটজাত খাবার খাই, তার বেশিরভাগই অনিরাপদ। শাকসবজি, ফলমূল খাবেন; সেটাও নিরাপদ নয়। হাঁস-মুরগি, গরু-ছাগলের মোটাতাজা করতে খাওয়ানো হয় বিভিন্ন ক্ষতিকর কেমিক্যাল। মাছ খাবেন? সেটাও নিরাপদ নয় বলে জানা গেছে। মাছ অল্প সময়ে বড় করার জন্য ব্যবহার করা হয় হরমোনসহ বিভিন্ন কেমিক্যাল। আর এসব ভেজাল খাবার খেয়ে আমরা নানা ধরনের জটিল রোগে আক্রান্ত হচ্ছি। তাই আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে সুস্থ রাখতে হলে খাবারে ভেজাল বন্ধ করতে হবে।
চিকিৎসকরা বলছেন, দেশে হৃদরোগী বেড়ে যাওয়ার সঙ্গে আমাদের অর্থনীতি ও আর্থসামাজিক অবস্থার উন্নয়নের সম্পর্ক আছে। এগুলো আমাদের প্রতিযোগিতার মধ্যে ঠেলে দিচ্ছে। ফলে আমাদের ওপর বাড়তি মানসিক চাপ পড়ছে। এই চাপ বাড়াচ্ছে হৃদরোগ ও ডায়াবেটিস। হৃদরোগ থেকে বাঁচতে প্রথমেই মানসিক চাপ কমাতে হবে। দ্বিতীয়ত খাদ্যাভ্যাস পাল্টাতে হবে। ফাস্টফুড খাওয়ার প্রবণতাও হৃদরোগের জন্য দায়ী। কারণ, এগুলোতে এক ধরনের লবণ থাকে। এ থেকে হৃদরোগ তো হয়ই, কিডনির রোগও হয়।
খাদ্যে ভেজালের বিষয়টি আমি নিজ থেকেই দেখেছি। আমরা সবাই কমবেশি ভেজাল খাবার খাচ্ছি। আমি পাবনার ঈশ্বরদী এলাকায় দেখেছি, তারা সবজিতে প্রতিদিন কীটনাশক ব্যবহার করে, কিন্তু নিজেরা সেই সবজি খায় না। আবার যারা লিচু চাষ করে, তারা নিজেরা খাওয়ার জন্য একটি লিচু গাছ আলাদা করে রেখে দেয়। টাঙ্গাইলের মধুপুরে দেখেছি, আনারস চাষিরা আনারস খায় না। কথা হলো, যেহেতু আমরা সবাই বুঝতে পারি কোনটা খারাপ আর কোনটা ভালো; তাই আসুন সবাই মিলে নিরাপদ খাদ্য উৎপাদন করি। আমি নিজে যেটা খাব না, সেটা অন্যকেও খাওয়াব না। নিরাপদ খাদ্যের বাংলাদেশ হলেই সম্ভব হৃদরোগমুক্ত বাংলাদেশ গড়া।
বলাবাহুল্য, হৃদরোগ এক দিনে হয় না। একবার হয়ে গেলে হয় রোগী মারা যায় অথবা রোগ নিয়েই বাঁচতে হয়। হৃদরোগের চিকিৎসাও অত্যন্ত ব্যয়বহুল। তা ছাড়া যথাসময়ে সুচিকিৎসাও পাওয়া যায় না। এ জন্য এই রোগ প্রতিকারের চেয়ে প্রতিরোধ করাই ভালো। সে জন্য একজন হৃদরোগী হিসেবে আমি বলব, খাবারের বিষয়টি যেন সবাই মেনে চলি। নিরাপদ খাবারের বিষয়ে অবশ্যই জোর দিতে হবে। সচেতনতা বাড়লে হৃদরোগের প্রকোপ কমবে- এটাই বিশ্বাস।
Posted ৪:৪৭ পূর্বাহ্ণ | সোমবার, ১১ অক্টোবর ২০২১
dailymatrivumi.com | Mohammad Salahuddin