নিজস্ব প্রতিবেদক:
বিশ্ববাজারে তৈরি পোশাক রফতানিতে হারানো মুকুট আবার ফিরে পেল বাংলাদেশ। এক বছরের ব্যবধানে ভিয়েতনামকে পেছনে ফেলে বাংলাদেশ আবার দ্বিতীয় শীর্ষ স্থানে ফিরল। বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম পোশাক রফতানিকারক দেশের মুকুট হারানোর পাশাপাশি ভিয়েতনামের রফতানি হিস্যাও কমেছে। তার বিপরীতে বেড়েছে বাংলাদেশের হিস্যা।
বৃহস্পতিবার প্রকাশিত বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার (ডব্লিউটিও) ‘ওয়ার্ল্ড স্ট্যাটিস্টিক্যাল রিভিউ ২০২২’ প্রতিবেদনে এ চিত্র উঠে এসেছে।
প্রতিবেদন অনুযায়ী, বরাবরের মতো বিশ্বে পোশাক রফতানিতে শীর্ষ স্থানে রয়েছে চীন। দ্বিতীয় অবস্থানে আছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ)। ইইউভুক্ত দেশগুলো ১৫ হাজার ১০০ কোটি ডলারের পোশাক রফতানি করেছে। যদিও একক দেশ হিসেবে বাংলাদেশ দ্বিতীয় শীর্ষ পোশাক রফতানিকারক। আর তৃতীয় ভিয়েতনাম।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, চীন, ইইউ, বাংলাদেশ, ভিয়েতনামসহ শীর্ষ ১০ রফতানিকারক দেশ গত বছর ৪৬ হাজার কোটি বা ৪৬০ বিলিয়ন ডলারের তৈরি পোশাক বিক্রি করেছে। অন্যদিকে ইইউ, যুক্তরাষ্ট্র, জাপান, যুক্তরাজ্য, চীন, কানাডা, কোরিয়া, রাশিয়াসহ শীর্ষ ১০ আমদানিকারক দেশ ৪১ হাজার ৪০০ কোটি ডলারের তৈরি পোশাক কিনেছে।
২০২০ সালে করোনাকালে বাংলাদেশকে টপকে দ্বিতীয় শীর্ষ তৈরি পোশাক রফতানিকারক দেশ হয়ে যায় ভিয়েতনাম। তার কয়েক বছর আগে থেকেই বাংলাদেশের সঙ্গে তীব্র প্রতিযোগিতা করেছে দেশটি। যদিও এক বছরের ব্যবধানে ২০২১ সালে তৈরি পোশাক রফতানিতে ভিয়েতনামকে পেছনে ফেলে দিয়েছে বাংলাদেশ।
ডব্লিউটিওর তথ্যানুযায়ী, বাংলাদেশ গত বছর রফতানি করেছে ৩ হাজার ৪০০ কোটি ডলারের তৈরি পোশাক। আর ভিয়েতনামের পোশাক রফতানির পরিমাণ ছিল ৩ হাজার ১০০ কোটি ডলার। ২০২০ সালে দেশটির রফতানি ছিল ২ হাজার ৯০০ কোটি ডলার। ঐ বছর করোনার কারণে বাংলাদেশের রফতানি ২ হাজার ৮০০ কোটি ডলারে নেমেছিল।
২০০০ সালে বৈশ্বিক পোশাক রফতানিতে ভিয়েতনামের হিস্যা ছিল দশমিক শূন্য ৯ শতাংশ। সে সময় বাংলাদেশের হাতে ছিল ২ দশমিক ৬ শতাংশ বাজার। পরের এক দশকে ভিয়েতনামের বাজার হিস্যা তিন গুণ বাড়লেও বাংলাদেশের মাত্র দেড় গুণের একটু বেশি বেড়েছে। ২০২০ সালেও বৈশ্বিক তৈরি পোশাকের বাজারে ভিয়েতনামের দখলে ছিল ৬ দশমিক ৪ শতাংশ হিস্যা। আর বাংলাদেশের হাতে ৬ দশমিক ৩ শতাংশ। তবে গত বছর ভিয়েতনামের হিস্যা কমে ৫ দশমিক ৮ শতাংশ হয়। বাংলাদেশের হিস্যা বেড়ে হয়েছে ৬ দশমিক ৪ শতাংশ।
ডব্লিউটিওর তথ্যানুযায়ী, চীন গত বছর ১৭ হাজার ৬০০ কোটি ডলারের তৈরি পোশাক রফতানি করেছে। ২০২০ সালে তাদের রফতানি ছিল ১৪ হাজার ২০০ কোটি ডলারের। ফলে বৈশ্বিক পোশাক রফতানিতে চীনের হিস্যা ৩১ দশমিক ৬ শতাংশ থেকে বেড়ে গত বছর ৩২ দশমিক ৮ শতাংশ হয়েছে।
বিশ্বে তৃতীয় ও চতুর্থ শীর্ষ তৈরি পোশাক রফতানিকারক দেশ হচ্ছে তুরস্ক ও ভারত। তাদের মধ্যে তুরস্ক গত বছর ১ হাজার ৯০০ কোটি ডলারের তৈরি পোশাক রফতানি করেছে। দেশটির হিস্যা সাড়ে ৩ শতাংশ। অন্যদিকে ভারত রফতানি করেছে ১ হাজার ৬০০ কোটি ডলারের পোশাক। তাদের বাজার হিস্যা ৩ শতাংশ।
ডব্লিউটিওর প্রতিবেদনে গত বছর বাংলাদেশের পোশাক রফতানি ৩ হাজার ৪০০ কোটি ডলার দেখানো হয়েছে। যদিও রফতানি উন্নয়ন ব্যুরো (ইপিবি) ও বিজিএমইএর তথ্যানুযায়ী, রফতানি হয়েছে ৩ হাজার ৫৮১ কোটি ডলারের তৈরি পোশাক। চলতি বছরের প্রথম ১০ মাসে ৩ হাজার ৬৬৬ কোটি ডলারের তৈরি পোশাক রফতানি হয়েছে। তার মধ্যে গত সেপ্টেম্বরে রফতানি কমেছিল সাড়ে ৭ শতাংশ।
বিজিএমইএ সভাপতি ফারুক হাসান বলেন, ২০২০ সালে করোনার কারণে কিছুদিন কারখানা বন্ধ ছিল। কয়েক বিলিয়ন ডলারের পোশাকের ক্রয়াদেশ বাতিল বা স্থগিত হয়। সে কারণে ওই বছর ভিয়েতনাম এগিয়ে যায়। তবে গত বছর করোনার মধ্যে আমাদের কারখানাগুলো সচল ছিল। উদ্যোক্তারাও সাহস করে বিনিয়োগ করেছেন। সংযোগ শিল্পেও বিনিয়োগ হয়েছে। অন্যদিকে করোনোর কারণে ভিয়েতনামের কারখানার উৎপাদন বাধাপ্রাপ্ত হয়। সব মিলিয়ে বাংলাদেশ আবার দ্বিতীয় শীর্ষ স্থানে উঠে এসেছে।
Posted ৬:৩৬ পূর্বাহ্ণ | শুক্রবার, ০২ ডিসেম্বর ২০২২
dailymatrivumi.com | Mohammad Salahuddin