লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি-এলডিপি প্রেসিডেন্ট ড. কর্নেল (অব.) অলি আহমদ বীরবিক্রম বলেছেন, গত ১১ বৎসর যাবৎ সমগ্র দেশ একদলীয় শাসনের অধীনে শাসিত হচ্ছে। কারো বাক স্বাধীনতা নাই। অন্যায়ের প্রতিকার নাই, মানুষ ন্যায় বিচার বঞ্চিত, সমাজে অবিচার অনাচার, মাদকের প্রভাব, দুর্নীতি, খুন, গুপ্ত হত্যা, ধর্ষণ, রাহাজানি, রাজনৈতিক নেতা কর্মীদের উপর নির্যাতনের কারণে জনজীবন দুর্বিষহ। দেশে সুশাসন অনুপস্থিত, দিনের বেলার পরিবর্তে বন্দুকের নলের মাথায় সরকারী কর্মচারী ও সরকারী দলের গুণ্ডা বাহিনীর দ্বারা যৌথভাবে রাত্রি বেলা নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচন ব্যবস্থা ও নির্বাচন কমিশন পঙ্গু। এরই মধ্যে টিকে থাকা খুবই কঠিন।
সোমবার এলডিপির ১৪তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত আলোচনায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
তিনি বলেন, বিগত ১১ বৎসরে তিলে তিলে প্রত্যেকটা প্রতিষ্ঠানকে ধ্বংস করে দেওয়া হয়েছে। এছাড়াও কোথাও সঠিকভাবে ধর্ম কর্ম নাই বললেই চলে। আল্লাহর ভয় রাজনীতিবিদদের মধ্যে নাই। মানুষের মধ্যে মন্যুষত্ব লোপ পেয়েছে। দেশ আজ গভীর সংকটের মধ্যে নিমজ্জিত। একদিকে করোনায় জনজীবন অতিষ্ঠ, অন্যদিকে বিনিয়োগ প্রায় বন্ধ। নতুন চাকরীর পথ রুদ্ধ, হাজার হাজার মানুষ চাকরীচ্যুত। দ্রব্য মূল্য লাগামহীন এবং মানুষের ক্রয় ক্ষমতার বাহিরে। প্রতিদিন সমাজে বৈষম্য সৃষ্টি হচ্ছে। সমাজে অত্যাচার, অনাচার কয়েক হাজারগুন বৃদ্ধি পেয়েছে। প্রতিনিয়ত ধর্ষণ, আত্মহত্যা, খুন, দুর্ঘটনা, দুর্নীতি এবং সর্বোপরি মাদকসেবীর সংখ্যা জ্যামিতিক হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে। বর্তমান সমাজ বসবাসের অনুপযোগী। মনে হয়, দেশে মনুষ্যত্ব এবং সভ্যতা লোপ পেয়েছে। এর মূল কারণ হচ্ছে, আমরা সকলে আল্লাহ্ এবং আল্লাহ্ রসুলের নির্দেশ অমান্য করে, অহংকার এবং প্রতিশোধের রাজনীতি প্রতিষ্ঠা করে চলেছি। ত্যাগের রাজনীতিতে আমরা বিশ্বাসী নই। ভোগের রাজনীতি হল আমাদের কাম্য। এর অন্যতম একটি কারণ হচ্ছে শিক্ষিত, দেশ প্রেমিক এবং দক্ষ ব্যক্তিরা রাজনীতিতে টিকে থাকতে পারছে না। কারণ রাজনীতি এখন ব্যবসায়ীদের দখলে। ফলে রাজনৈতিক দলগুলিও ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান হিসেবে পরিচালিত হচ্ছে। এই অবস্থা থেকে পরিত্রাণের একটি মাত্র উপায়, তাহল মনুষ্যত্বের বিকাশ এবং সুশাসন প্রতিষ্ঠা। সমাজে এই দুইটি জিনিস নিশ্চিত করতে পারলেই দেশ পুনরায় সঠিক পথে পরিচালিত হবে। কাউকে না কাউকে দেশকে সঠিক পথে আনার দায়িত্ব নিয়ে উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে। এভাবে ছেড়ে দিয়ে বসে থাকলে হবে না।
এলডিপির ১৪তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী আলোচনা সভায় অংশ নিয়ে তিনি বলেন, রাজনৈতিক দলে কেউ করো চাকর নয় বা কর্মচারীও নয়। একে অপরের প্রতি দুর্ব্যবহার করার বা নেতৃত্বের প্রভাব খাটানোর ফল সবসময় ধংস ডেকে আনে। আমাদের সকলকে একে অপরের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হতে হবে। প্রত্যেক নেতা কর্মীকে তার নিজের মনোভাব, চিন্তাচেতনা নেতাদের সম্মুখে প্রকাশ করার সুযোগ করে দিতে হবে। বাঁধা সৃষ্টিকারীরা পার্টির বন্ধু নয়। বরং পাটির ক্ষতি ডেকে আনে। সুতরাং আমি আশা করব, আমাদের সকলকে স্বৈরাচারী মনোভাব পরিহার করতে হবে। একে অপরের প্রতি বন্ধুসুলভ আচরণ করতে হবে। এতে করে পার্টি লাভবান হবে, অধিক সংখ্যক মানুষ আমাদের পার্টিতে যোগদানে আগ্রহী হবে।
এলডিপির মহাসচিব ড. রেদোয়ান আহমেদের সভাপতিত্বে সভায় ভার্চুয়ালে বক্তব্য রাখেন জামায়াতে ইসলামী বাংলাদেশের সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরোয়ার, কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল (অব.) সৈয়দ মুহাম্মদ ইব্রাহিম, জাগপার সহসভাপতির রাশেদ প্রধানসহ ২০ দলীয় জোট ও জাতীয় মুক্তিমঞ্চের নেতৃবৃন্দ বক্তব্য রাখেন।
Posted ১২:৩৬ অপরাহ্ণ | সোমবার, ২৬ অক্টোবর ২০২০
dailymatrivumi.com | Mohammad Salahuddin