হেফাজতে ইসলামের যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা মামুনুল হককে রোববার (১৮ এপ্রিল) গ্রেফতার করেছে পুলিশ। রাজধানীর মোহাম্মদপুরের জামিয়া রাহমানিয়া মাদ্রাসা থেকে তাকে গ্রেফতার করা হয়। গত এক সপ্তাহে এ নিয়ে গ্রেফতার করা হয়েছে সংগঠনটির ৯ কেন্দ্রীয় নেতাকে। এ ছাড়া আরও ২৫ শীর্ষ নেতাসহ হেফাজতের ৩৫ জন বর্তমানে নজরদারিতে আছেন বলে জানা গেছে।
নজরদারি বা আটক হওয়া হেফাজতের বেশির ভাগ নেতাই ২০১৩ সালে সহিংসতার ঘটনায় কোনো না কোনো মামলার আসামি। এ ছাড়া গত ২৬ মার্চ ভারতের প্রধানমন্ত্রীর বাংলাদেশ সফরকালে বিভিন্ন স্থানে সহিংসতার মামলায়ও অনেকে আসামি হয়েছেন। সে সময় সারাদেশে ৭৭টি মামলা করা হয়েছে। এসব মামলায় আসামির সংখ্যা প্রায় ৪৯ হাজার এবং আটক হয়েছেন মোট ৪৫০ জন।
রোববার গ্রেফতার হওয়া হেফাজতে ইসলামের যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা মামুনুল হকের বিরুদ্ধে রয়েছে ১৮টি মামলা। গ্রেফতারের পর রোববার রাতে তাকে ডিবি কার্যালয়ে রাখা হয়। গণমাধ্যমকে এমনটাই জানান ডিবির যুগ্ম কমিশনার মাহবুব আলম।
তিনি বলেন, শুধু রোববার রাতই মামুনুল হককে ডিবি কার্যালয়ে রাখা হবে। এ সময় তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। সোমবার (১৯ এপ্রিল) সকালে মোহাম্মদপুর থানা পুলিশ ডিবি কার্যালয় থেকে তাকে কোর্টে নিয়ে যাবে।
পুলিশের তেজগাঁও বিভাগের উপকমিশনার হারুন অর রশীদ গণমাধ্যমকে বলেন, ২০২০ সালে মোহাম্মদপুরে একটি ভাঙচুরের মামলায় মামুনুলকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তার বিরুদ্ধে আরও কয়েকটি মামলা আছে মতিঝিল থানা, পল্টন থানা ও নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁয়ে। পরে সেগুলো সমন্বয় করা হবে। সোমবার মামুনুলকে আদালতে তুলে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য রিমান্ড চাওয়া হবে।
এদিকে মোহাম্মদপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুল লতিফ সময় সংবাদকে বলেন, ‘মামুনুলকে সোমবার আদালতে প্রেরণ করে সাত দিনের রিমান্ড চাওয়া হবে। ২০২০ সালের মোহাম্মদপুর থানার একটি ভাঙচুর ও নাশকতার মামলায় তদন্ত চলছিল। তদন্তে হেফাজত নেতা মামুনুলের সম্পৃক্ততার বিষয়টি সুস্পষ্ট হওয়ায় আমরা তাকে গ্রেফতার করেছি। এ ছাড়া দেশের বিভিন্ন স্থানে তার বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে।’
মামুনুল হক ঢাকায় হেফাজতের গুরুত্বপূর্ণ নেতাদের মধ্য অন্যতম একজন। রাজধানীতে হেফাজতের কর্মসূচিতে তিনি দ্রুত জমায়েত করাতে পারেন। হেফাজতের মাঠপর্যায়ের নেতাকর্মীদের কাছে জনপ্রিয় মুখও তিনি। গত ৩ এপ্রিল নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁয়ে রয়্যাল রিসোর্টে দ্বিতীয় স্ত্রীসহ ঘেরাও হওয়ার পর মামুনুল হকের একাধিক বিয়ের খবর বের হয়। একের পর এক অডিও রেকর্ড সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ফাঁস হওয়ার পর ব্যাপক আলোচনার বিষয়ে পরিণত হন তিনি।
এদিকে মাওলানা মামুনুলের আগে গ্রেফতার হন হেফাজতের যুগ্ম মহাসচিব ও ঢাকা মহানগর সভাপতি মাওলানা জুনায়েদ আল হাবীব। তাকে গ্রেফতারের পর রোববার আদালতে হাজির করে ৭ দিনের রিমান্ডে নিয়েছে পুলিশ। পল্টন থানায় ২০১৩ সালের একটি মামলায় তার রিমান্ড আবেদন করে পুলিশ। এ ছাড়া রোববারই শেষ হয়েছে সংগঠনটির কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক আজিজুল হক ইসলামাবাদীর রিমান্ড। এরপর তাকে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।
জানা গেছে, মোদিবিরোধী সহিংসতার পর আটকের সম্ভাব্য তালিকায় আছেন হেফাজতের শীর্ষ ২৫ নেতা। পুলিশের তথ্যমতে, ২০১৩ সালের ৫ মে মতিঝিলের শাপলা চত্বরে সহিংসতার ঘটনায় হেফাজতের যেসব নেতার বিরুদ্ধে মামলা হয়েছিল, তাদের মধ্যে যারা এখনো সক্রিয় রয়েছেন, এমন ৩০ জনের একটি তালিকা পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগকে দেওয়া হয়েছে।
তালিকায় রয়েছেন হেফাজতের আমির জুনায়েদ বাবুনগরীসহ ৩০ জন। এর মধ্যে পাঁচজন ইতিমধ্যে গ্রেফতার হয়েছেন। বাকি ২৫ জন নজরদারিতে আছেন। পর্যায়ক্রমে তাদের আইনের আওতায় আনা হবে।
এ প্রসঙ্গে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের যুগ্ম কমিশনার মো. মাহবুব আলম গণমাধ্যমকে বলেন, হেফাজত নেতাদের বিরুদ্ধে গ্রেফতার অভিযান অব্যাহত থাকবে। দলটির আরও ৩৫ নেতা তাদের ‘ওয়াচ লিস্ট’–এ রয়েছেন। পর্যায়ক্রমে সবাই গ্রেফতার হবেন।
Posted ৫:৪০ পূর্বাহ্ণ | সোমবার, ১৯ এপ্রিল ২০২১
dailymatrivumi.com | Mohammad Salahuddin