রাজশাহীর বাঘা উপজেলার আড়ানী পৌর স্বেচ্ছাসেবক লীগের উপদেষ্টা ও কলেজ শিক্ষক মনোয়ার হোসেন মজনু ও তার স্ত্রী-ছেলেকে মারধরের সময় ওই পৌরসভার মেয়র মুক্তার আলী মদ্যপ অবস্থায় ছিলেন। বুধবার দুপুরে রাজশাহী জেলা পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে প্রেস ব্রিফিংয়ে এ তথ্য জানান পুলিশ সুপার এ বি এম মাসুদ হোসেন।
এ মারধর ও বাড়ি ভাংচুরের ঘটনায় দায়ের করা মামলায় মেয়র মুক্তার আলী বাড়িতে অভিযান চালিয়েছে পুলিশ। মঙ্গলবার রাত ১টা থেকে ভোর পাঁচটা পর্যন্ত তার বাড়িতে অভিযান চালানো হয়। এ সময় পুলিশ তার বাড়ি থেকে প্রায় নগদ এক কোটি টাকা, ১৮ লাখ টাকার চেক, চারটি অবৈধ অস্ত্র, গুলি ও মাদক উদ্ধার করেছে। অভিযানে মেয়র মুক্তার আলীকে গ্রেপ্তার করা না গেলেও তার স্ত্রী জেসমিন আক্তার, দুই ভাতিজা সোহান ও শান্তকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন) আবু সালেহ মো. আশরাফুল আলম এবং সহকারী পুলিশ সুপার (চারঘাট সার্কেল) রুবেল মাহমুদের নেতৃত্বে এ অভিযান চালানো হয়।
প্রেস ব্রিফিংয়ে জেলা পুলিশ সুপার জানান, মেয়র মুক্তার আলীর বাড়িতে অভিযান চালিয়ে একটি বিদেশি অটোমেটিক পিস্তল, একটি ওয়ানশুটার গান, একটি দেশি তৈরি বন্দুক, একটি এয়ার রাইফেল উদ্ধার করা হয়েছে। এছাড়াও বিদেশি পিস্তলের ১৭ রাউন্ড তাজা গুলি, ৪টি গুলির খোসা, শটগানের ২৬ রাউন্ড গুলি, ১০গ্রাম গাঁজা, ৭ পুরিয়া হেরোইন, ২০ পিস ইয়াবা, নগদ ৯৪ লাখ ৯৮ হাজার টাকা এবং মেয়রের স্বাক্ষর করা ১৮ লাখ টাকার চেক উদ্ধার করা হয়।
তিনি বলেন, মঙ্গলবার রাত ৯টার দিকে আড়ানী পৌরসভার জয়বাংলা মোড়ে মেয়র মুক্তার আলী তার দলবল নিয়ে শিক্ষক মনোয়ার হোসেন মজনুকে মারধর করেন। এ সময় মেয়রের দুই ভাতিজাও মারধরে অংশ নেয়। মারধরের এক পর্যায়ে মজনু সেখান থেকে পালিয়ে বাড়ি চলে যান। এরপর মেয়রসহ তার দলবল ধাওয়া দিয়ে মজনুর বাড়িতে গিয়ে ফের মারধর করেন। এ সময় মজনুর স্ত্রী ও ছেলে বাঁধা দিতে গেলে তাদেরও মারধর করেন মেয়র মুক্তার আলী। রাতে কলেজশিক্ষক মজনু থানায় মামলা দায়ের করলে পুলিশ ওই মেয়রের বাড়িতে অভিযান চালায়। মজনু গত পৌর নির্বাচনে নৌকা প্রতীকে নির্বাচন করেন (মুক্তার আলীর বিপক্ষে)। এ কারণে তার ওপর মেয়রের ক্ষোভ ছিল বলে ধারণা করা হচ্ছে।
প্রেস ব্রিফিংয়ে জানানো হয়, মেয়র মুক্তার আলীর বিরুদ্ধে মারামারিসহ বিভিন্ন অভিযোগে ৫টি মামলা ছিল। মামলায় তিনি জামিনে ছিলেন। মঙ্গলবারের অভিযানে তাকে গ্রেপ্তার করা যায়নি। তবে তাকে গ্রেপ্তারে পুলিশ নজরদারি বাড়িয়েছে।
পুলিশ সুপার বলেন, বুধবার মুক্তার আলীর বিরুদ্ধে মারধর ও বাড়িঘর ভাঙচুরের অভিযোগে মামলা করেছেন কলেজ শিক্ষক মজনু। এছাড়া পুলিশ তার বিরুদ্ধে অস্ত্র আইনে ও মাদক আইনে মামলা দেবে। তার বাড়িতে বিপুল পরিমাণ টাকা পাওয়া গেছে- এর উৎসও অনুসন্ধান করা হচ্ছে। ওই টাকার সঠিক উৎস না পেলে প্রচলিত নিয়মে আরেকটি মামলা দেওয়া হবে।
মেয়র মুক্তারের স্ত্রী, ছেলে ও ভাতিজাদের বিষয়ে তিনি বলেন, মেয়রের ঘরে অস্ত্র, মাদক ও টাকা পাওয়া গেছে। এ ঘটনায় তার স্ত্রী জেসমিন আক্তারের বিরুদ্ধে তার সহযোগী হিসেবে মামলা করা হবে। মেয়রের ছেলের ঘরে মাদক পাওয়া গেছে- সেজন্য তার বিরুদ্ধে মাদক আইনে মামলা দেওয়া হচ্ছে। ভাতিজাদের বিরুদ্ধে ইতিমধ্যেই মারধরের শিকার কলেজ শিক্ষক মজনু বাদী হয়ে মামলা দায়ের করেছেন।
সার্বিক বিষয়ে পুলিশ সুপার মাসুদ হোসেন বলেন, তিনি মেয়র, সেজন্য পুলিশের অনুকম্পা পাবেন; এমনটি নয়। অপরাধী যে-ই হোক না কেন পুলিশ তাকে ছাড় দেবে না। আমরা এই ঘটনাগুলোর অনুসন্ধান চালাচ্ছি এবং তাকে দ্রুত গ্রেপ্তার করার চেষ্টা চালাচ্ছি।
প্রেস ব্রিফিংকালে অন্যদের মধ্যে- অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন) আবু সালেহ মো. আশরাফুল আলম, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর) ইফতেখায়ের আলম, সহকারী পুলিশ সুপার (চারঘাট সার্কেল) রুবেল মাহমুদ প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
প্রসঙ্গত, মুক্তার আলী আড়ানী পৌর আওয়ামী লীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক। ২০১৫ সালের পৌর নির্বাচনে তিনি দলীয় মনোনয়ন পেয়ে আওয়ামী লীগ থেকে মেয়র নির্বাচিত হয়েছিলেন। চলতি বছর অনুষ্ঠিত পৌর নির্বাচনে ফের আওয়ামী লীগের মনোনয়ন চেয়েও পাননি। স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করে তিনি মেয়র নির্বাচিত হন।
নৌকার প্রার্থীর বিপরীতে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করায় তাকে আওয়ামী লীগ থেকে বহিষ্কার করা হয়। আড়ানী পৌর নির্বাচনকে ঘিরে সেই সময় ব্যাপক সহিংসতা ঘটে।প্রতিপক্ষকে মারধর ও আওয়ামী লীগ প্রার্থীর পথসভায় হামলার অভিযোগে সেসময় মুক্তার আলীর বিরুদ্ধে মামলা করেন উপজেলা যুবলীগের সভাপতি কামরুজ্জামান।
Posted ১২:৪৮ অপরাহ্ণ | বুধবার, ০৭ জুলাই ২০২১
dailymatrivumi.com | Mohammad Salahuddin