নিজস্ব প্রতিবেদক:
লকডাউনে হোটেল-রেস্তরাঁ বন্ধ করতে বলা না হলেও রেস্তরাঁয় বসে না খাওয়ার নির্দেশনা ছিল। অর্থাৎ ক্রেতাদের খাবার কিনে নিয়ে বাসায় যেতে বলা হয়েছিল। তবে ক্রেতা না থাকায় রাজধানীসহ সারা দেশের অনেক রেস্তোরাঁ বন্ধ রেখেছেন মালিকরা। ফলে কাজ হারিয়ে বেকার হয়ে পড়েছেন রেস্তরাঁয় কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করা লাখ লাখ শ্রমিক-কর্মচারী। অন্যদিকে ব্যবসা বন্ধ থাকায় মাথায় হাত পড়েছে মালিকদের। বাংলাদেশ রেস্টুরেন্ট মালিক সমিতির তথ্য অনুযায়ী, ক্রেতা না থাকায় সারা দেশের প্রায় ৮০ শতাংশ রেস্তরাঁ বন্ধ রেখেছে মালিকরা।
আর যে ২০ শতাংশ রেস্তরাঁ খোলা আছে, তারাও ক্রেতা পাচ্ছে না। এরফলে প্রতিদিনই লোকসান গুনতে হচ্ছে তাদের। সমিতির দেয়া তথ্যমতে, রাজধানীসহ সারা দেশে ৭০-৮০ হাজার রেস্তরাঁ রয়েছে।
এতে কাজ করছেন প্রায় ২০ লাখের মতো শ্রমিক-কর্মচারী। আর ঢাকায় রয়েছে প্রায় ৮ হাজার। রেস্তরাঁগুলোতে সব মিলিয়ে প্রায় আড়াই লাখ শ্রমিক কাজ করতেন।
সরজমিন দেখা যায়, রাজধানীর ছোট-বড় বেশিরভাগ রেস্তরাঁ বন্ধ রয়েছে। তবে ইফতারের আগে কিছু রেস্তরাঁ খোলা দেখা যায়। মিরপুরে ২ এ অবস্থিত পুলিশ রেস্তরাঁটিতে লকডাউনের আগে বেশিরভাগ সময়ই ক্রেতাদের ভিড় লেগে থাকতো। এখানে কাজ করতো ৪০ জন কর্মচারী। কিন্তু এখন রেস্তরাঁটিতে মাত্র ৮-১০ জন কর্মচারী কাজ করছে। বাকিদের ছাঁটাই করা হয়েছে। রেস্তরাঁর ম্যানেজার কিবরিয়া বলেন, সারাদিন বেচাকেনা নেই। সন্ধ্যার সময় শুধু ইফতার বিক্রি হয়। মহাজন লসের মধ্যে আছে। আমরা চরম অনিশ্চয়তার মধ্যে আছি। কারণ বিক্রি না হওয়ায় অনেক রেস্তরাঁ এখন বন্ধ। আমাদেরটা বন্ধ হবে না তার কোনো নিশ্চয়তা নেই। বন্ধ হলে যে কয়জন আছি তারাও বেকার হয়ে যাবো।
শুধু মিরপুর নয়, রাজধানীর মোহাম্মদপুর, ধানমণ্ডি, পান্থপথ, কাওরান বাজারসহ সব এলাকারই ছোট-বড় অধিকাংশ রেস্তরাঁ বন্ধ। যেগুলো খোলা আছে তারা পার্সেল সিস্টেম এবং হোম ডেলিভারি চালু করেছে। এরপরও ব্যবসা আগের তুলনায় খুবই খারাপ।
পান্থপথের অষ্টব্যঞ্জন রেষ্টুরেন্টের মালিক সাইফুল আজম বলেন, আপাতত আমরা কোনোমতে টিকে আছি। পার্সেলের পরিমাণ খুবই কম। এছাড়া আমরা নিজেরাই হোম ডেলিভারি দিচ্ছি। এতে কিছু বিক্রি হচ্ছে। কিন্তু ব্যবসার অবস্থা খুবই খারাপ। যা আয় হচ্ছে তা দিয়ে দোকান ভাড়া আর কর্মচারীদের বেতন দিতেই চলে যায়। এভাবে বেশিদিন চললে রেষ্টুরেন্ট বন্ধ করে দিতে হবে।
মিরপুরে একটি বন্ধ রেস্তরাঁর সামনে থাকা মোবাইল নাম্বারে কল দিলে কথা হয় মালিকের সঙ্গে। তিনি বলেন, লকডাউনে বেচাকেনা না থাকায় হোটেল বন্ধ করতে বাধ্য হয়েছি। কর্মচারীদের ছুটি দিয়েছি। বেচাকেনা ভালো হলে আবার নিয়োগ দেয়ার কথা বলেছি। কিন্তু কবে পরিস্থিতি ভালো হবে কে জানে। কর্মচারীরা বেকার বসে আছে। আমরাও লসের মধ্যে আছি। ইতিমধ্যেই অনেক টাকার ক্ষতি হয়ে গেছে। ঋণ করে রেস্তোরাঁ ব্যবসা শুরু করেছি। এই অবস্থা চলতে থাকলে পথে বসতে হবে। গতবারের লকডাউনেও একই হাল হয়েছিল। অনেক শ্রমিকের বেতন দিতে পারিনি।
বাংলাদেশ রেষ্টুরেন্ট মালিক সমিতির সাংগঠনিক সম্পাদক সৈয়দ মুহাম্মদ আন্দালিব মানবজমিনকে বলেন, এই সেক্টরের সঙ্গে ১ কোটিরও বেশি মানুষ সরাসরি জড়িত। এখান থেকেই তাদের জীবিকা নির্বাহ হয়। সারা দেশে ৭০-৮০ হাজার রেষ্টুরেন্ট রয়েছে। প্রত্যেক রেষ্টুরেন্টে যদি ২০ জন করেও কর্মচারী থাকে তাহলে অন্তত ২০ লাখ মানুষ এখানে কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করে। এর সঙ্গে তাদের পরিবার, রেষ্টুরেন্টের মালিকরা ও তাদের পরিবার রয়েছে। সব মিলিয়ে অন্তত ১ কোটি মানুষ এই সেক্টরের সঙ্গে জড়িত। কিন্তু বার্তমানে ব্যবসা বন্ধ থাকায় এই মানুষগুলো মহাসংকটে পড়েছে। আমাদের অপূরণীয় ক্ষতি হয়ে গেছে। কর্মচারীরাও সংকটে পড়েছে। তিনি বলেন, দেশে সবকিছু চলছে। বাজারে মানুষ চলাচল করে আর রেষ্টুরেন্টে বসে মানুষ খেতে পারবে না। প্রথম লকডাউনে একেবারে বন্ধই ছিল। এবার আমরা অনেক অনুনয়-বিনয় করে খোলা রাখার ব্যবস্থা করেছি। কিন্তু ক্রেতা না থাকায় মালিকরা অনেক রেষ্টুরেন্ট বন্ধ করে দিতে বাধ্য হয়েছে। সারা দেশে ৮০ শতাংশ রেষ্টুরেন্ট বন্ধ। তবে ঢাকায় ৬৬ শতাংশ রেষ্টুরেন্ট খোলা আছে। তারা কোনোমতে পার্সেল বিক্রি করছে। কিন্তু এভাবে ব্যবসা চলতে পারে না।
Posted ৪:২৯ পূর্বাহ্ণ | শনিবার, ০১ মে ২০২১
dailymatrivumi.com | Mohammad Salahuddin