কোরবানির ঈদে মুন্সীগঞ্জের মিরকাদিমের ধবল (সাদা) গরুর চাহিদা বেশি পুরান ঢাকায়। প্রতিবছরের ন্যায় এবারও ঢাকার রহমতগঞ্জে মিরকাদিমের ধবল গরুর হাট বসবে। দীর্ঘ বছর ধরেই ধবল গরুর সুনাম ধরে রেখেছে ঢাকার রহমতগঞ্জ হাটে। আর ধবল গরু কিনেই কোরবানি দেয় পুরান ঢাকাবাসী। এ ছাড়া মিরকাদিমের বুট্টি গরু ও বাজা গাভির জন্য বিখ্যাত হওয়ায় দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে উৎকৃষ্টমানের গরু কিনতে অপেক্ষায় থাকেন বিত্তশালী ও ব্যবসায়ীরা। তবে ক্রমাগত লোকসান ও গো-খাদ্যের দাম বৃদ্ধির কারণে অনেকে গরু মোটাতাজাকরণ ব্যবসায় আগ্রহ হারিয়ে ফেলায় খামারের সংখ্যাও ব্যাপকভাবে কমে যাচ্ছে। এক কথায়, মিরকাদিমের ধবল গরু এখন বিলুপ্তির পথে। তাই ধবল গরুর পাশাপাশি নেপালি, হাঁসা, পশ্চিমা ও সিন্ধি জাতের গরু পাওয়া যাচ্ছে মিরকাদিমে। করোনাভাইরাসের কারণে লকডাউন থাকায় ধবল গরুসহ উন্নত জাতের গরু বিক্রি করতে পারবেন কিনা তা নিয়ে শঙ্কায় খামার মালিকরা।
স্থানীয় খামারিরা জানিয়েছেন, বিশেষভাবে পালন কৌশলের কারণে এসব গরুর গোশত সুস্বাদু হয়। সাধারণত খৈল, ভুসি, খুদ ইত্যাদি খাওয়ানো হয় এবং স্বাস্থ্য ভালো গরুগুলোর যত্ন নেন খামার মালিকরা। তাই দাম ও চাহিদাও বেশি। পুরোনো ঢাকার রহমতগঞ্জসহ রাজধানীর বড় বড় হাটে এসব গরু পাওয়া যায়। তবে কয়েক বছর ধরে পুরান ঢাকার ব্যবসায়ীরা ঈদের কয়েক মাস আগেই মিরকাদিমে চলে আসেন গরু কিনতে। তারা বাড়ি বাড়ি ঘুরে গরু পছন্দ করে কিনে নেন এবং গৃহস্থদেরই ঈদ পর্যন্ত গরু পালনের দায়িত্ব ও খরচ দিয়ে যান। ফলে কোরবানির হাটে ওঠার আগেই অনেক গরু বিক্রি হয়ে যায়। তবে এখনও পুরান ঢাকার ঐতিহ্যবাহী পরিবারগুলো মিরকাদিমের গরু কোরবানিকে পারিবারিক ঐতিহ্য মনে করে।
স্থানীয় এগ্রো ফার্মের মালিক হাজি গোলাম মোস্তফা বলেন, লাভ-লোকসানের কথা চিন্তা না করেই পুরোনো ঐতিহ্য ধরে রাখতে ধবল গরু পালন করছি। বাবা-দাদারাও ধবল গরু পালন করতেন। তারই ধারাবাহিকতা ধরে রাখতে খামার ব্যবসায় যুক্ত হওয়া। আমার খামারে শতাধিক গরু রয়েছে। ধবল গরু আছে ৪০টির মতো। ধবল ছাড়াও শাইয়াল, নেপালি, ভুটান ও সিন্ধি জাতের গরু রয়েছে। করোনার কারণে গো-খাদ্যের দাম বেশি। গরুগুলোকে মিরকাদিমের ধান, গম আর তেলের কারখানা থেকে ভুসি, কুড়াসহ বিভিন্ন উন্নতমানের গো-খাদ্য, মিনিকেট চালের খুদ, এক নম্বর খৈল, ভাতের মাড়, সিদ্ধ ভাত, খেসারির ভুসি, গমের ভুসি, বুটের ভুসি খাওয়ানো হয়। এ ছাড়া প্রশিক্ষিত লোক নিয়োগের মাধ্যমে খামারের গরুগুলো পালন করা হয়।
হাজি গোলাম মোস্তফা বলেন, পুরান ঢাকার রহমতগঞ্জ ও গনি মিয়ার হাটে ধবল গরুসহ উন্নত জাতের গরু বংশপরম্পরায় বিক্রি করে আসছি। খামারে দুই লাখ থেকে ১০ লাখ টাকা দামের গরু রয়েছে বলে জানান তিনি।
হাবিব হাজির খামারের শ্রমিক সাদের আলী বলেন, ছোটবেলা থেকে ধবল গরু লালনপালন করছি। অভিজ্ঞতা থাকায় ২২ হাজার টাকা বেতনে খামারে কাজ করছি। তবে আগের মতো ঘরে ঘরে মিরকাদিমে কেউ গরু পালন করেন না। আগে রহমতগঞ্জের গনি মিয়ার হাট বলতে মিরকাদিমের গরুকে বোঝাত। এখন হাতেগোনা কয়েকজন গরু পালন করেন।
মিরকাদিমের গৃহস্থ ইয়াকুব আলী জানান, বাপ-দাদারা যেভাবে গরু পালন করেছেন, আমরা সেভাবে পারি না। আগের সাদা জাতের ধবল গাভি গরু আগের মতো পাওয়া যায় না। বিশ্বজিৎ বণিক জানান, গাভি গরু গৃহস্থ পরিবারের লক্ষ্মী। এ এলাকায় গৃহস্থরা গাভি গরুই লালন-পালন করেন। মশা-মাছির কামড় থেকে রক্ষার জন্য মশারির ভেতরে রাখা হয় এবং গরমে বৈদ্যুতিক পাখা আর ঠান্ডার জন্য গরম কাপড় শরীরে জড়িয়ে রাখাসহ অনেক যত্ন নিয়ে পালন করা হয়।
মুন্সীগঞ্জ জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা কুমুদ রঞ্জন মিত্র বলেন, এ জেলায় ১৫ থেকে ২০টি খামারে এখন ধবল গরু পালন করা হচ্ছে। তবে এ বছর খামারগুলোতে কতকগুলো ধবল গরু রয়েছে, তার সঠিক সংখ্যা জানা নেই। তবে খামারিদের সংখ্যা দিন দিন অনেক কমছে। ধবল গরু পালনে খামারিদের উৎসাহিত করা হচ্ছে।
Posted ৮:০৭ পূর্বাহ্ণ | মঙ্গলবার, ০৬ জুলাই ২০২১
dailymatrivumi.com | Mohammad Salahuddin