ইসলামে ব্যবসা হচ্ছে উপার্জনের অন্যতম পবিত্র এক মাধ্যম। প্রিয় নবী হজরত মোহাম্মদ (সা.)-কে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, ‘নিজ হাতে কাজ করা এবং হালাল পথে ব্যবসা করে যে উপার্জন করা হয় তা-ই সর্বোত্তম।’ মিশকাত, ২৭৮৩। নবীজি (সা.) নিজেও ব্যবসা করেছেন। ইসলামী বিধান মেনে যে ব্যবসা পরিচালিত হয় তা হালাল। এটি ইবাদতও বটে। আল্লাহতায়ালা সুরা জুম’আতে এরশাদ করেছেন, ‘যখন সালাত শেষ হয়ে যাবে তখন তোমরা পৃথিবীতে ছড়িয়ে পড় এবং আল্লাহর অনুগ্রহ (জীবিকা) তালাশ কর।’ আল্লাহতায়ালা ও প্রিয় নবী মোহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ (সা.) যে কাজ করতে বলেছেন সব ইবাদত। সব মুসলমান এ কথা বিশ্বাস করেন; হারামে শাস্তি, হালালে শান্তি। ব্যবসা ঠিক ততক্ষণ হালাল উপার্জনের মাধ্যম থাকে, যতক্ষণ মানুষ ব্যবসার ভেতর ভেজাল, মিথ্যা, ধোঁকাবাজি না ঢোকায়।
ব্যবসা যদি পরিচ্ছন্ন হয় তো তাদের জন্য পবিত্র জান্নাতের সুসংবাদ। নবীজি (সা.) বলেন, ‘সত্যবাদী আমানতদার ব্যবসায়ী কিয়ামতের দিন নবী, ছিদ্দীক্ব এবং শহীদগণের সঙ্গে থাকবে।’ তিরমিযি ১২০৯; ছহিহ আত-তারগিব ওয়াত তারহিব, ১৭৮২। একজন মানুষের জন্য এর চেয়ে বড় পাওয়া আর কী হতে পারে? ভালো কাজের প্রাপ্তি যেমন বড়, বিপরীতে শাস্তিও তেমন বড়। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘কিয়ামতের দিন ব্যবসায়ীরা মহাঅপরাধী হিসেবে উত্থিত হবে। তবে যারা আল্লাহকে ভয় করবে, নেকভাবে সততা ও ন্যায়-নিষ্ঠার সঙ্গে ব্যবসা করবে তারা ব্যতীত।’ তিরমিযি, ১২১০; ইবনে মাজাহ, ২১৪৬।
কৃত্রিম সংকট তৈরি করে বেশি দামে পণ্য বিক্রয় সম্পর্কে নবীজি (সা.) বলেন, ‘যে মজুতদারি করে সে পাপী।’ মুসলিম, ৪২০৬। আমাদের ব্যবসায়ীদের ভেতর এ কাজটি আমরা খুব বেশি দেখতে পাই। কখনও ইচ্ছাকৃতভাবে কোনো পণ্যের সংকট তৈরি করা হচ্ছে। কখনও চাহিদা অনুযায়ী কয়েকগুণ বেশি দামে মাল বিক্রি করা হচ্ছে। সেটা হোক ওষুধপথ্য কিংবা অন্য কিছু। পেঁয়াজ, মরিচ, চাল, তেল, লবণ এমন কিছু নেই যে পণ্যটার চাহিদা দেখামাত্র ব্যবসায়ীরা হু হু করে দাম বাড়াচ্ছে না। সারা বছর যে জিনিস সস্তায় পাওয়া যায় সংকটে তা পাওয়া যায় না। চিকিৎসাসেবার নামে মানুষের সঙ্গে এই ব্যবসায়ী চক্র যে ধোঁকাবাজি করেছে, তা আমাদের বিস্মিত করে। একদিকে মহামারি; তারপরও মানুষের পশুত্বের যেন শেষ নেই।
কেউ কেউ এমন কথাও বলেন, মিথ্যা না বললে ব্যবসা হয়? আবু কাতাদা (রা.) হতে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন : ‘ব্যবসার মধ্যে অধিক কসম খাওয়া হতে বিরত থাক। এর দ্বারা মাল বেশি বিক্রি হয় কিন্তু বরকত বিনষ্ট হয়ে যায়।’ মুসলিম, ১৬০৭ মিশকাত, ২৭৯৩। কসম তো নৈমিত্তিক ব্যাপার। কোনো কোনো ব্যবসায়ী কসম করে বলেন, কেনা দামে দিয়ে দিছি। অনেকে আবার পণ্যে ভেজাল দেয়। ওষুধে ভেজাল, খাদ্যে ভেজাল। আসলে মানুষ যখন ভেজাল হয়ে যায়, মনুষ্যত্বহীন হয় তখন তার দ্বারা সবকিছু করা সম্ভব। না হলে খাঁটি পণ্যের নিশ্চয়তা দিলেন! বড়ই হাস্যকর। আসলে আমরা এসবে অভ্যস্ত হয়ে গেছি। এতটা অভ্যস্ত হয়েছি, সংকটময় মুহূর্তেও আমরা চতুরতার সঙ্গে ভেজাল, মিথ্যা আর প্রতারণার মাধ্যমে সহজ-সরল মানুষের পকেট থেকে টাকা হাতিয়ে নিচ্ছি। প্রতারক ব্যবসায়ী ভাবছেন না, যার থেকে নিতান্ত দুর্বলতার সুযোগে ধোঁকাবাজির
মাধ্যমে টাকা নিচ্ছেন তিনি পারিবারিকভাবে কতটা অসহায়। আপনি এ খবর রাখেন না অথবা রাখলেও তা আপনার অন্তরে বিন্দুমাত্র রেখাপাত করে না। আদালত দিবসে অসহায় মানুষগুলোর সঙ্গে আপনার এ ব্যবসায়িক প্রতারণা জাহান্নামের কারণ হতে পারে। বুখারি ও মুসলিম শরিফের হাদিস, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘তোমরা ক্রেতাকে ধোঁকা দেওয়ার লক্ষ্যে ক্রেতার মূল্যের ওপর মূল্য বৃদ্ধি করে ক্রেতাকে ধোঁকা দিয়ো না।’
এমনটা নয় যে, প্রয়োজন বা দুর্ভোগের সময় মানুষের প্রয়োজনীয় দ্রব্যসামগ্রীর মূল্য একদিনে ছয়গুণ, দশগুণ বেশি দামে বিক্রি না করলে তার বিরাট ক্ষতি হয়ে যাবে। বরং সততার সঙ্গে ব্যবসা করলে, দুনিয়াতেই আল্লাহতায়ালা তার ব্যবসায় বরকত দান করবেন। লোভ-লালসা ত্যাগ করে ব্যবসায়ীদের সত্যের ওপর টিকে থাকতেই হবে। ইসলামে সৎ ব্যবসায়ীদের জন্য রয়েছে জান্নাতের সুসংবাদ আর অসৎ ব্যবসায়ীদের জন্য ভয়ংকর আজাব।
Posted ৮:০৩ পূর্বাহ্ণ | শুক্রবার, ১০ সেপ্টেম্বর ২০২১
dailymatrivumi.com | Mohammad Salahuddin